Thursday, April 16, 2020

SEM IV (PLS HONS) LIBERAL THINKING OF RAMMOHON

Political Science Honours
Semester-4 /Core-9
Indian Political Thought – I

Qus. Evaluate the socio-religious and political ideas of Raja Rammohun Roy. Do you think he was the pioneer of liberal thinking in India?
ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে নবজাগরণ প্রসূত যে যুক্তিবাদী চিন্তাধারার আবির্ভাব ঘটেছিল তার সার্থক প্রতিনিধি হলেন রাজা রামমোহন রায়। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত রামমোহন ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, কারন তিনি সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন একমাত্র পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণা প্রসারের মধ্যে দিয়েই ভারতীয় সমাজ আধুনিকতার পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। স্বাভাবিকভাবে নিজের চিন্তাদর্শন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি পাশ্চাত্য উদারনৈতিক দর্শন দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় যুক্তিবাদ ও উদারনৈতিক দর্শনের প্রয়াসটি কখনোই একটিমাত্র ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি যেমন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ধর্মীয় এবং সামাজিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন তেমনি আধুনিকতার লক্ষ্যে ইংরাজী শিক্ষার প্রসারের ওপরেও গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। নিম্নে রামমোহনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রের উদারনৈতিক ভাবধারা পর্যালোচনা করে গেল।
রামমোহনের ধর্মীয় সংস্কারসমূহ
যুক্তিবাদ এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি রামমোহনের গভীর আগ্র্হ স্বাভাবিকভাবে তৎকালীন ভারতীয় সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ধর্মীয় আচরন বিধিকে যৌক্তিকতার নিরিখে বিশ্লেষণের জন্য তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে তৎকালীন হিন্দুধর্ম কতকগুলি অনৈতিক ও কুসংস্কারমূলক আচরণ বিধি দ্বারা আক্রান্ত ছিল এবং এর ফলে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রসমূহের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা সমাজে প্রতিষ্ঠা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই রামমোহন হিন্দু ধর্মের সংস্কারের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন।
তৎকালীন হিন্দু ধর্মের সংস্কার করতে গিয়ে রামমোহন হিন্দু ধর্মের দুটি প্রথাকে মূলতঃ আক্রমণ করেন যার একটি ছিল মূর্তিপূজা এবং অপরটি বহুশ্বরবাদ। রামমোহনের মতে হিন্দু ধর্মের প্রামাণ্য শাস্ত্র বেদ ও উপনিষদের কোথাও মূর্তিপূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না। মূলতঃ হিন্দুদের অজ্ঞতা, প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা এবং পুরোহিত গোষ্ঠীর স্বার্থান্বেষী মনোভাব হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজার প্রচলন ও প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছে।। একইভাবে রামমোহন দাবী করেছেন প্রধানত মধ্যযুগে হিন্দু ধর্মে যে বহুশ্বরবাদের আবির্ভাব ঘটেছে তার সাথে বৈদিক যুগে স্বীকৃত ব্রাহ্মণ্যবাদের ধারণার কোন সাদৃশ্য নেই। নিজের তুহ্ফৎ-উল-মুজাহিদিন পত্রিকায় রামমোহন উল্লেখ করেন পৃথিবীর সকল প্রধান ধর্মই একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এবং তারা সকলেই বিশ্বাস করেন ঈশ্বর হলেন সেই চূড়ান্ত সত্য যাকে কখনোই বিভাজিত করা যাব না। সুতরাং, রামমোহনের মতে মূর্তিপূজা এবং বহুশ্বরবাদের ধারণা দুটি বৈদিক ধর্ম বোধের বিকৃত রূপ, যা হিন্দু জনসমাজকে পশ্চাদপর করে তুলেছে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন রামমোহন কখনোই সামগ্রিকভাবে হিন্দু ধর্মের বিরোধিতা করান নি। তিনি কেবলমাত্র সংস্কারের মধ্যমে হিন্দু ধর্মকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
রামমোহনের সামাজিক সংস্কারসমূহ
ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় কুসংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক কুপ্রথাগুলিও রামমোহন কর্তৃক সমালোচিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে রামমোহনের প্রধান অবদান ছিল সতীদাহ প্রথার নিবারণ। তিনি মনে করতেন সতীদাহ প্রথা কার্যত স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের বেঁচে থাকার অধিকারের অস্বীকৃতি প্রদানের নামান্তর মাত্র। তাঁর মতে, এই প্রথা গড়ে ওঠার পেছনে প্রধান কারণ ছিল মানুষের অজ্ঞতা এবং বিধবা নারীকে স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার প্রয়াস। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, অঙ্গীরার ন্যায় ঋষিগন সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন করলেও মনু বা পরাশর কখনোই এই প্রথাকে বাধ্যতামূলক বলেন নি। এমনকি কেউ কেউ বলেন স্বামীর মৃত্যুর পরও একজন নারী ধার্মিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে রামমোহন উপলব্ধি করেছিলেন কেবলমাত্র ধর্মীয় যুক্তি নয়, এর সাথে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এই কুপ্রথাকে নিবারণ করা সম্ভব।
সতীদাহ প্রথার পাশাপাশি বহুবিবাহ প্রথা, কুলীন প্রথা, বাল্যবিবাহ প্রথা ইত্যাদি হিন্দু সামাজিক প্রথা রামমোহন কর্তৃক সমালোচিত হয়েছিল। তিনি বলেন, এই প্রথাগুলি আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ করা উচিৎ, কারণ এগুলি হিন্দু সমাকে নারীদের দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি করেছে। সর্বোপরি, রামমোহন প্রাচীন ভারতে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী পিতার সম্পত্তির ওপর মেয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র এর মধ্যে দিয়েই হিন্দু সমাকে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
রামমোহনের রাজনৈতিক সংস্কারসমূহ
রামমোহনের চিন্তা দর্শনের আলোচনা সম্পূর্ণ করতে গেলে তাঁর রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাটি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। রামমোহনের রাজনৈতিক ধারণাগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এক্ষেত্রে তিনি উদারনৈতিক দর্শন দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। উদারনৈতিক চিন্তকরূপে উদারনৈতিক বিশ্বাস, ব্যক্তির মর্যাদা, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। রামমোহনের উদারনৈতিক দর্শনের প্রকাশ প্রথম ঘটে ব্রিটিশ আইনের অনুশাসনের ধারণার প্রতি তাঁর সমর্থনের মধ্যে দিয়ে। তাঁর মতে, এই ধারণাটি সর্বপ্রথম ভারতীয়দের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। রামমোহনের উদারনৈতিক দর্শনের অপর একটি প্রকাশ হল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় তাঁর প্রয়াস। ১৮২২ সালে ব্রিটিশ সরকার যখন একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলিকে এই মর্মে মুচলেকা প্রদান করে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে যে, এতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কোন লেখা বা বক্তব্য প্রকাশ করা হবে না। তখন রামমোহনই সর্বপ্রথম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন। তাঁর মতে, এই নির্দেশিকাটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের সমান এবং একইসাথে এই সময়ের প্রতিবাদস্বরূপ তিনি মিরাজ-উল-আকবর পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি এই নির্দেশিকা জারীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু সেখানেও সাফল্য না পাওয়ায় ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের জন্য ব্রিটিশ রাজপরিষদের কাছে আবেদন করেন। এতে তিনি বলেন সরকারকে সফল পথে পরিচালনা করার জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রয়োজন। সুতরাং অবিলম্বে এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
রামমোহনের উদারনৈতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন অন্য যে সকল বিষয়ে লক্ষ্য করা যায় সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমর্থন, জুরি বিলের বিরোধিতা, ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের ভারতীয়করণ ইত্যাদি।
সুতরাং, উপরে আলোচিত ব্যক্তি স্বাধীনতা, সাম্য, ব্যক্তি অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সম্পর্কে রামমোহনের অভিমত লক্ষ্য করে নিঃসন্দেহে তাঁকে ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতে প্রথম প্রগতিশীল উদারনৈতিক চিন্তক রূপে অভিহিত করা যায়। রামমোহনের চিন্তাদর্শনের এই ক্ষেত্রগুলি লক্ষ্য করে অধ্যাপক বি.বি. মজুমদার রামমোহনকে আধুনিক ভারতের উদারনৈতিক যৌক্তিক চিন্তাধারার জনকরূপে অভিহিত করেছেন। তবে একইসাথে রামমোহনের উদারনৈতিক দর্শনের নিম্নলিখিত সীমাবদ্ধতাগুলিকে অস্বীকার করা যায় না।
প্রথমতঃ, রামমোহন ব্যক্তি স্বাধীনতার দাবীটিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেও তিনি কখনোই ভারতে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীকে তুলে ধরেন নি। বরং তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এই কারণে অশোক সেন এবং রজতকান্ত রায় রামমোহনকে একজন ‘Comprador’ বলে অভিহিত করেছেন যিনি নিজ স্বার্থে বিদেশী শাসনকে সমর্থন করেছিলেন।
দ্বিতীয়তঃ, রামমোহন ব্যক্তি অধিকার ও সামাজিক সাম্য রক্ষের ওপর গুরুত্ব দিলেও সমাজের জাতিভেদ সম্পর্কে খুব বেশি আলোচনা করেন নি, যা তাঁর উদারনৈতিক চিন্তাধারায় স্ববিরোধিতার জন্ম দিয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন রামমোহনের প্রধান সমস্যা ছিল তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক মতবাদের স্বরূপ কখনোই সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন নি। তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক দিকটিকে লক্ষ্য করেছেন কিন্তু এর শোষণমূলক চরিত্রটি উপলব্ধি করতে পারেন নি। সুতরাং, শুধুমাত্র এই দিক থেকে বিশ্লেষণ করে তাঁর উদারনৈতিক দর্শনের প্রতি সংশয় জ্ঞাপন করা যুক্তিযুক্ত নয়।
x---------------x