Thursday, April 16, 2020

SEM IV (PLS HONS) Core-9 Shantiparva IN Mahabharata

Political Science Honours
Semester-4 /Core-9
Indian Political Thought – I
Qus. Explain after ‘Shantiparva’ of the Mahabharata the concept of ‘Rajdharma’. Does the concept of Rajdharma combine the ideas of Manusmriti and Arthashastra?
প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহ বা মহাকাব্য বা অন্যান্য রচনাসমূহ পাঠ করলে দেখা যায় মনুস্মৃতি এবং অর্থশাস্ত্রের পাশাপাশি মহাভারতের মধ্যে দিয়ে প্রাচীন ভারতের রাজ্যশাসন, সরকার পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মহাভারতের শান্তিপর্বের আলোচনা তাৎপর্যপূর্ণ। মহাভারতের শান্তিপর্বে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ভীষ্ম যেভাবে যুধিষ্ঠিরকে রাজ্যশাসন সংক্রান্ত উপদেশাবলী প্রদান করেছিলেন সেটি নিঃসন্দেহে রাজধর্ম পালন, রাজার দায়িত্ব সম্পাদন, রাজার উৎপত্তি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাচীন ভারতের ধারণাকে পরিস্ফুট করে তুলেছে। এই শান্তিপর্বে ভীষ্ম যেমন একদিকে রাজা এবং রাজ্যের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করেছেন তেমনই একজন রাজার রাজধর্ম বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য সম্পর্কেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
রাজধর্ম সম্পর্কে শান্তিপর্ব
মহাভারতের শান্তিপর্ব অনুযায়ী রাজধর্ম হল সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান শক্তি। রাজার কর্তব্য হল সমগ্র রাজ্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা। এই দিক থেকে বলা যায় রাজধর্মের মধ্যে অর্থ, ধর্ম এবং কামশাস্ত্রের সহাবস্থান ঘটেছে। একইসাথে এই রাজধর্মের মধ্য দিয়ে সমাজের উচ্চ তিনটি স্তরের জনগণ বা জাতির অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ও কার্যাবলী ব্যাখ্যা করে সেগুলি রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শান্তিপর্ব অনুযায়ী রাজধর্মের অনুপস্থিতিতে সার্বিকভাবে সমাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এ প্রসঙ্গে শান্তিপর্বে বলা হয়েছে অন্য সকল ধর্ম যেখানে সীমাবদ্ধ ফল প্রদান করে এবং সমাজের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কর্তব্য পালনের কথা বলে সেখানে রাজধর্ম সমগ্র সমাজের স্বার্থরক্ষার জন্য সকল জনগণের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়াসী হয়। এই দিক থেকে বিশ্লেষণ করে শান্তিপর্বে বলা হয়েছে রাজধর্ম যেহেতু সমাজের সকলের স্বার্থরক্ষার কথা বলে সেহেতু এটি অন্য সকল ধর্মের থেকে শ্রেষ্ঠ। শান্তিপর্ব অনুযায়ী নৈতিক দিক থেকেও এই রাজধর্ম শ্রেষ্ঠ কারণ এটি আত্মত্যাগ এবং আত্মোপলব্ধি ধারণা দুটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। সর্বোপরি, এই রাজধর্মে বলা হয়েছে একজন রাজাকে সর্বদাই প্রজাদের রক্ষাকল্পে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জনে প্রস্তুত থাকতে হবে। সুতরাং, সামাজিক দিক থেকে রাজধর্ম হল “The highest duty that stands for righteous path”।
মহাভারতের শান্তিপর্ব পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রাজধর্ম সম্পর্কে এখানে যে ধারণা নির্মাণ করা হয়েছে তার সাথে মনুস্মৃতি ও অর্থশাস্ত্রে উল্লিখিত রাজধর্ম সম্পর্কে বক্তব্যের সাদৃশ্য রয়েছে। মনুস্মৃতি, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এবং মহাভারতের শান্তিপর্ব রাজধর্মকে একইভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রধান কার্যকরী শক্তিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা গেল।
রাজধর্ম ও মনুস্মৃতি
মহাভারতের শান্তিপর্ব যেভাবে সকল জাতির স্বার্থ সুরক্ষাকে রাজধর্মের প্রধান দায়িত্ব বলে চিহ্নিত করেছে তার অস্তিত্ব মনুস্মৃতিতে লক্ষ্য করা যায়। মনুস্মৃতি হিন্দু সমাজের প্রতিষ্ঠিত জাতি ব্যবস্থার ধারণাকে যৌক্তিকতা প্রদানের প্রয়াস করেছে। মনু জাতি ব্যবস্থার ধারণাকে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা বলে দাবী করলেও তিনি বিভিন্ন জাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধানসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রয়াস করেছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য মনুস্মৃতির জাতি বিভাজনটি ছিল সামাজিক বিভাজন। মনুর মতে, রাজার প্রধান কর্তব্য হল সমাজের ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং প্রজাগণ যাতে সর্বোচ্চ সুখ লাভ করতে পারে তার জন্য রাজার উচিৎ সমাজে নৈতিক কর্তব্য প্রতিষ্ঠিত করা। কলাশাস্ত্র বা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, আত্মত্যাগের মানসিকতা প্রতিষ্ঠিত করা ইত্যাদি শান্তিপর্বের ন্যায় মনুস্মৃতির ক্ষেত্রে দেখা যায়। মনু রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে মনে করলেও রাজার প্রতি জনগণের চূড়ান্ত আনুগত্যের ধারণাকে সমর্থন করেন নি, বরং তাঁর মতে জনগণের ক্ষতিসাধনকারী রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত বা হত্যা করার পূর্ণ অধিকার জনগণের রয়েছে। এই সকল দিক থেকে দেখা যাব শান্তিপর্বে যেভাবে আদর্শ রাজা এবং রাজধর্ম প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে সেই একই বিষয় মনুস্মৃতিতেও আলোচিত হয়েছে।
রাজধর্ম ও অর্থশাস্ত্র
মনুস্মৃতির ন্যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজ্য পরিচালনা বা রাজধর্ম সম্পর্কে যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে তার প্রতিফলনও শান্তিপর্বে লক্ষ্য করা যায়। অর্থশাস্ত্রের তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায়ে কৌটিল্য যথাক্রমে প্রশাসনিক ন্যায়বিচার, অপরাধ দমন, শাস্তি প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কৌটিল্যের মতে, সমাজে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্যই রাজাকে ন্যায় পদ্ধতিতে দণ্ড নীতি প্রয়োগ করতে হয়। তিনি বলেন, জনগণকে তাদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করার জন্যই শাস্তি প্রদান প্রয়োজন। তবে একইসাথে তিনি বলেন, রাজা কখনোই তার রাজদণ্ডকে অত্যন্ত কঠোরভাবে বা কোমলভাবে প্রয়োগ করবেন নাম বরং এই দুই চরম সীমার মধ্যে রাজা ভারসাম্য বিধান করে চলবেন। এই উদ্দেশ্যে রাজাকে অবশ্যই সাম্, দান, বেদ এবং দণ্ড – এই চার প্রকার নীতি বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
অর্থশাস্ত্রের সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ অধ্যায়ে কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন রাজা অবশ্যই সর্বদা নিজের শক্তি সংগঠনে নিয়োজিত থাকবেন। তিনি বলেন, প্রজাদের সুখ বৃদ্ধি এবং রাজ্যের শক্তি ও স্বার্থ রক্ষার জন্যই রাজাকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে কৌটিল্যের প্রধান বক্তব্য হল একজন রাজা অবশ্যই হবেন প্রজাবৎসল, কিন্তু একইসাথে সমাজের ধর্ম প্রতিষ্ঠায় তিনি বিচক্ষণতার সাথে রাজদণ্ড ব্যবহার করবেন।
সুতরাং, উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাব শান্তিপর্বে পিতামহ ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে রাজধর্ম সংক্রান্ত যে উপদেশ প্রদান করেছেন তার অনুসারী বক্তব্য মনুস্মৃতি এবং অর্থশাস্ত্রেও প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, ভারতে প্রাচীন সময় থেকে যে আদর্শে রাজধর্ম পালনের ঐতিহ্য আত্মপ্রকাশ করেছে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন মনুস্মৃতি, অর্থশাস্ত্র এবং মহাভারতের শান্তিপর্বে প্রত্যক্ষ করা যায়। সুতরাং এদিক থেকে মনুস্মৃতি, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এবং মহাভারতের শান্তিপর্বের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
x-----------x