POLITICAL CULTURE
Political Culture
আধুনিক
যুগে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের আলোচনার ক্ষেত্রে যে তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে
তার অন্যতম ভিত্তিরূপে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণাটি বিবেচিত হয়ে থাকে। যে কোন
সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়ে মূল্যবোধ বা মাত্রাবোধের প্রতীক রূপে রাজনৈতিক
সংস্কৃতি প্রতিপন্ন হয়ে থাকে। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যক্তিবর্গের
মনোভাব, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি সাধারণভাবে সমন্বিতভাবে রাজনৈতিক
সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি হল কোন দেশের বিদ্যমান
রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে দেশবাসীর একটি ভাবগত ধারণা, মানসিক অনুভূতি ও একটি
বিশেষ অনুভূতি।
অধ্যাপক
অ্যালান বল তার ‘Modern
Politics and Government’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক
সংস্কৃতি গঠিত হয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক বিষয়াদির সাথে সম্পর্কযুক্ত
বিভিন্ন মনোভাব, বিশ্বাস, আবেগ, অনুভূতি ও মূল্যবোধকে নিয়ে। বিদ্যমান রাজনৈতিক
ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে এই সকল মনোভাব নিহিত থাকে। ‘Comparative Politics’ গ্রন্থে
অ্যালমন্ড ও পাওয়েল উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে বিভিন্ন বিষয় জড়িত থাকে
যেগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে নির্বাচন করা যায় অথবা সেগুলিকে পরিমাপ করা যায়। তাদের
মতে, “Political culture is the pattern of
individual attitudes and orientations toward politics among the members of a
political system”। আবার, ‘Aspects of Political Development’ নামক গ্রন্থে লুসিয়ান পাই উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে
কতকগুলি মনোভাব, বিশ্বাস ও মানসিক অনুভূতির সমষ্টিকে বোঝায় যেগুলির মাধ্যমে
রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অর্থবহ ও সুশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।
সুতরাং,
উপরের সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বলা যেতে পারে রাজনীতি সম্পর্কে
মনস্তাত্ত্বিক ও ব্যক্তিগত মাত্রাবোধের এক চরম অভিব্যক্তি হল রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন ব্যক্তি মানুষ জন্ম লাভ করেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির
অধিকারী হয় না। বরং, কোন একটি সমাজব্যবস্থায় কতকগুলি উপাদানের সমন্বয়ে রাজনৈতিক
সংস্কৃতির ধারণাটি গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির এই উপাদানগুলি হল:
(১)
অভিজ্ঞতাবাদী বিশ্বাসসমূহ যেগুলির দ্বারা শাসক ও শাসিতের সম্পর্কটি প্রভাবিত হয়ে
থাকে।
(২)
ব্যক্তিবর্গের সংবেদনশীল মনোভাব যার দ্বারা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও তার
প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি জনগণের অনুকূল মনোভাব গড়ে উঠে।
(৩)
সরকারের অভিপ্রেত উদ্দেশ্য, জনসাধারণের ব্যক্তিগত ধারণা ও উৎকর্ষতা প্রভৃতিকে নিয়ে
গড়ে ওঠা বিশ্বাস রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণীবিভাজন
রাজনৈতিক সংস্কৃতি
সকল সমাজে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মূল মাধ্যম হলেও বিভিন্ন সমাজে একই
ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয় না। বরং প্রচলিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া
প্রসঙ্গে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক
সংস্কৃতির শ্রেণীবিভাজন সম্ভব। ‘The Civic Culture’ নামক গ্রন্থে অ্যালমন্ড ও ভার্বা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে
তুলনামূলক আলোচনার প্রেক্ষাপটে নিম্নলিখিত তিন ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উল্লেখ
করেছেন।
(১) সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি
যখন কোন সমাজে
রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চেতনা বা আগ্রহের অভাব পরিলক্ষিত
হয় তখন তাকে সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলা হয়। মূলত রাজনৈতিক জীবনধারা ও
জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে দেশবাসীর প্রবল অনীহার কারণে সংকীর্ণতাবাদী
রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
(২) অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি
যখন কোন সমাজে
জনগণ রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন থাকে এবং প্রতিটি ব্যক্তি রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয়ভাবে
অংশগ্রহণ করে থাকে এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার একজন সক্রিয় সভ্য বলে নিজেকে
মনে করে তখন সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে অভিহিত
করা হয়।
(৩) নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি
যে
সমাজব্যবস্থায় নাগরিকগণ রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন থাকা সত্ত্বেও কোন বিশেষ কারণে
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আগ্রহ প্রকাশ করে না সেই সমাজের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নিষ্ক্রিয়
রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে অভিহিত করা হয়।
প্রাথমিকভাবে
অ্যালমন্ড ও ভার্বা সকল রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে উপরিউক্ত তিনভাগে ভাগ করলেও পরবর্তী
সময়ে তারা উল্লেখ করেছেন কোন সমাজব্যবস্থাতেই এই তিন ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতির
কোনটিই বিশুদ্ধভাবে অবস্থান করে না। বরং প্রতিটি সমাজেই মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি
অবস্থান করে। এই কারণে অ্যালমন্ড ও ভার্বা পরবর্তী সময়ে চার ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উল্লেখ
করেছেন। এগুলি হল:
(১)
সংকীর্ণ-অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি;
(২)
অংশগ্রহণমূলক-নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি;
(৩)
সংকীর্ণতাবাদী-নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি; এবং
(৪) পৌর সংস্কৃতি।
x--------------x