Sunday, April 26, 2020

6th Sem Honours Nature of Religion by Swami Vivekananda

ধর্মের প্রকৃতি (Nature of Religion): জীবনের প্রয়োজনীয় দিক হিসেবে ধর্ম :
  বিবেকানন্দ বলেন, 'মানব জাতির ভাগ্য গঠনের জন্য যে সমস্ত শক্তি এতকাল কাজ করে এসেছে এখনো কাজ করছে তাদের মধ্যে অধিক প্রভাবশালী শক্তি হল ধর্ম রূপে অভিব্যক্ত শক্তি। সমস্ত রকমের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পেছনে এই অপূর্ব শক্তির কার্যকারিতা বিদ্যমান।আবার  সমস্ত ব্যষ্টিমানবেরর  মধ্যেই সংহতির মহত্তর  প্রেরণা এই শক্তি থেকে উদ্ভূত।একথা সত্য যে অগণিত ক্ষেত্রে ধর্মের যে বন্ধন তা জাতি,জলবায়ু এমনকি বংশের বন্ধন অপেক্ষাও দৃঢ়তর। আর একথাও স্পষ্ট বা সুবিদিত যে, যারা একই ঈশ্বরের উপাসক, একই ধর্মে বিশ্বাসী, তারা একই বংশজাত মানুষদের এমনকি তার ভাইয়ের অপেক্ষা আরো বেশি দৃঢ়তা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে একে অন্যের সাহায্য করেছে।'
  তিনি মনে করেন জীবনে ধর্মের প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন, যেমন অন্ন বস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদিকেই  আমরা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন বলে মনে করি।কিন্তু এই সমস্ত দৈহিক জাগতিক প্রয়োজনই জীবনের সবদিক পূরণ করে না। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বিলাসবহুল জীবনের নিরাপত্তা ও আরাম ছেড়েও মানুষ আরো উচ্চতর,আরো শান্তির জীবনের অন্বেষণ করেছে বারে বারে এটাই তার ধর্মের আকাঙ্ক্ষা।
  তিনি বলছেন, 'মানব মনকে গতিশীল করার জন্যে ধর্ম একটি শ্রেষ্ঠ নিয়ামক শক্তি।ধর্ম আমাদের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চার করতে পারে, অন্য কোনো আদর্শ তা পারে না। মানবজাতির ইতিহাস থেকে স্পষ্টতই প্রতীত হয় যে, অতীতে এইরকম হয়েছে এবং ধর্মের শক্তি এখন নিঃশেষিত হয়ে যায়নি। কেবল হিতবাদ অবলম্বন করলেই যে মানুষ খুব সৎ এবং নীতিপরায়ণ হতে পারে তা আমি অস্বীকার করি না। এই জগতে এমন অনেক মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন তারা হিতবাদ অনুসরণ করেও সম্পূর্ণ,নির্দোষ এবং নীতিপরায়ণ ছিলেন।কিন্তু যে সমস্ত মহামানব বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের স্রষ্টা,যারা জগতে যেন চৌম্বক শক্তিরাশি সঞ্চারিত করেন,যাদের শক্তি শত সহস্র ব্যক্তির উপর কাজ করে।যাদের জীবন অপরের জীবনে আধ্যাত্মিক অগ্নি প্রজ্বলিত করে,এইরকম মহাপুরুষদের মধ্যে আমরা সর্বদা আধ্যাত্মশক্তির প্রেরণা দেখতে পাই।তাঁদের প্রেরণা শক্তি ধর্ম থেকে এসেছে।
  যে অনন্ত শক্তিতে মানুষের জন্মগত অধিকার, যা তার প্রকৃতিগত, তা উপলব্ধি করার জন্যে ধর্মই সর্বাপেক্ষা বেশি প্রেরণা দেয়।চরিত্র গঠনে সৎও মহৎ কার্য সম্পাদনে নিজের ও অন্যের জীবনে শক্তি স্থাপনে ধর্ম সর্বোচ্চ প্রেরণা শক্তি সুতরাং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এর অনুশীলন করা উচিত। পূর্বপেক্ষা উদার ভিত্তিতে ধর্মের অনুশীলন আবশ্যক। সর্বপ্রকার সংকীর্ণ, অনুদার ও বিবদমান ধর্ম ভাব দূর করতে হবে। সমস্ত সাম্প্রদায়িক স্বজাতীয় বা স্বগোত্রীয় ভাব পরিত্যাগ করতে হবে। প্রত্যেক জাতীয় গোষ্ঠীর নিজস্ব ঈশ্বর উপাসনা থাকবেন এবং অন্যের ঈশ্বর মিথ্যা-----এই জাতীয় ধারণা কুসংস্কার, এগুলো ভিত্তিহীন। তাই এগুলো অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া উচিত।'
  বিবেকানন্দ মনে করেন, মানব সমাজের ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করা যায়,তবে দেখা যায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ধর্মের মৃত্যু ঘটেনি কখনও কখনও একে অপ্রোজনীয় বলে জড়বাদীরা বা অতি উৎসাহে তথাকথিত বিজ্ঞানবাদীরা দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন,কিন্তু কিছুদিন পরে আবার ধর্ম স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানব জীবনে।