Saturday, April 25, 2020

6th sem honours Ways of Relisation

জ্ঞানযোগ

   জ্ঞানের পথ বলতে বিবেকানন্দ বুঝেছেন অজ্ঞানজনিত 'বন্ধন' এর উপলব্ধি। তার মতে অজ্ঞাতা হলো বস্তুর যথার্থ প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা। সত্য এবং অসত্যের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাই অজ্ঞতা।
    তাঁর মতে, জ্ঞানযোগ তিনভাগে বিভক্ত ১. শ্রবণ, অর্থাৎ আত্মা একমাত্র সৎ পদার্থ এবং অন্যান্য সবকিছু মায়া -এই তথ্য শোনাই হল শ্রবণ। ২. মনন অর্থাৎ সব দিক থেকে এই তথ্যকে বিচার করা। ৩.নির্দিধ্যাসন,অর্থাৎ সমস্ত বিচার ত্যাগ করে তত্ত্বকে উপলব্ধি করা।এই উপলব্ধির চারটি সাধন। যথা ১. ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা রূপ দৃঢ় ধারণা, ২. সর্ব প্রকারের এষণা ত্যাগ, ৩.সমদমাদি ও ৪.মুমুক্ষত্ব। তত্ত্বের নিরন্তর ধ্যান এবং আত্মাকে তার প্রকৃত স্বরূপ স্মরণ করিয়ে দেওয়া এই যোগের একমাত্র পথ। এই যোগ সর্বশ্রেষ্ঠ কিন্তু কঠিনতম।অনেকের বুদ্ধিগ্রাহ্য হতে পারে।কিন্তু অত্যন্ত অল্প সংখ্যক মানুষ এই যোগে সিদ্ধিলাভ করতে পারেন। 
     জ্ঞানযোগে এক চরম সত্যের উপলব্ধির জন্য চাই একাগ্রতা। কিন্তু এই একাগ্রতা সহজ পথ নয়। একাগ্রতার জন্য প্রয়োজন আত্মার সমগ্র শক্তি। দৈহিক ক্রিয়ার জন্যই বাজে খরচ হয়ে যায় আত্মার শক্তি। তাই আত্মার শক্তিকে দৈহিক ক্রিয়া-কলাপ থেকে যতদূর সম্ভব প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অর্থাৎ দেহ ইন্দ্রিয়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিষয়টিকে সুন্দর হয় বিবেকানন্দ ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর লেখায় এভাবে:
          প্রথমত ধ্যান নেতিমূলক হবে। অর্থাৎ সমস্ত চিন্তা দূর করে দিতে হবে। যা মনে আসে তার প্রবল ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে তাকে থামিয়ে দিতে হবে।
           এরপর দৃঢ়তার তার সঙ্গে আমাদের যা প্রকৃত স্বরূপ সেই ব্যাপারে মনোনিবেশ কর। মনের মধ্যে তিনটি ভাবা আনো।সৎ-চিৎ-আনন্দ। অস্তিভাব, জ্ঞান-স্বভাবএবং প্রেমস্বরূপ।
      ধ্যানের মাধ্যমে দ্রষ্টা এবং দৃশ্যের ঐক্যের অনুভূতি আসে। মনে হয়, যিনি দেখছেন, এবং যাকে দেখা হচ্ছে, তারা এক, অভিন্ন।
       এই জ্ঞানের নিরন্তর অভ্যাস দৈহিক কামনা বাসনাকে প্রথমে নিয়ন্ত্রণ, তারপরে নিঃশেষ করে। এটাই 'আত্মত্যাগ'। বিবেকানন্দের মতে,এই 'আত্মত্যাগ' হলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞানযোগ অভ্যাসের পক্ষে। এই আত্মত্যাগ সমস্ত রকম স্বার্থপরতা থেকে ব্যক্তিকে মুক্ত করে। একে বলে 'বৈরাগ্য'।এই বৈরাগ্য এলে আত্মত্যাগের আর এক সদর্থক দিক উন্মুক্ত হয় আমাদের কাছে -------যাকে ব্রহ্মানুভূতি-ই বলা যায়, তখন আমাদের উপলব্ধি হবে:
    "ঊর্ধ্ব আমার দ্বারা পরিপূর্ণ। অধঃ আমার দ্বারা পরিপূর্ণ। মধ্য আমার দ্বারা পরিপূর্ণ। আমি নিজের সবকিছুতে আছি অর্থাৎ সর্বভূতে বিরাজিত। আমার সবকিছু অর্থাৎ সর্বভূত আমার মধ্যে বিরাজ করছে।ওম,তৎ,সৎ-আমিই সেই। আমি মনের ঊর্ধ্বে সৎ স্বরূপ। আমি বিশ্বের একমাত্র আত্মাস্বরূপ। আমি সুখও নই, দুঃখও নই।
        আত্মা নয়, দেহই পান করে, আহার ইত্যাদি করে। কিন্তু আমি দেহ নই মন নই। সোহহম্। আমিই সেই।
      আমি সাক্ষীস্বরূপ। আমি দ্রষ্টা। যখন দেহ সুস্থ থাকে, আমি সাক্ষী। আবার যখন কোন রোগ আক্রমণ করে তখনো আমি সাক্ষীস্বরূপ।
   আমি সচ্চিদানন্দ। আমি সার পদার্থ। জ্ঞানের অমৃতস্বরূপ। অনন্ত কালে আমার কোনো পরিবর্তন নেই। আমি শান্ত দীপ্যমান পরিবর্তন-রহিত। আমি শান্ত, আলোকময়, আমার কোনো পরিবর্তন নেই।"
                                  -------------