Monday, April 27, 2020

Programme Course- GE-II/ 6th Sem

Globalisation and Human Rights


Globalisation and Human Rights
            ঠাণ্ডা যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল একটি প্রক্রিয়া রূপে বিশ্বায়নের উদ্ভব। একটি প্রক্রিয়া রূপে বিশ্বায়নের প্রভাব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না থেকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও প্রবাহিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি অনুন্নত দেশে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সক্ষম হলেও এটি একই সাথে সামাজিক ক্ষেত্রে কতকগুলি সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে যে বিষয়টির ওপর সম্ভবত সর্বাপেক্ষা প্রভাব পড়েছে সেটি হল মানবাধিকারের ক্ষেত্র। বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষ কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ার কারণে প্রায়শই মহিলাদের কৃষি ক্ষেত্রে শ্রম দানের জন্য বাধ্য করা হয় যা নিঃসন্দেহে মহিলাদের মানবাধিকারের ক্ষেত্রটিতে পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এক কথায় এই বিশ্বায়নের ধারণার আবির্ভাবের কারণে মানবাধিকারের ক্ষেত্রটিতে এক গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
মানবাধিকার রক্ষার সাধারণ ব্যবস্থাসমূহ
     যদিও নীতিগতভাবে মানবাধিকারের ধারণাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে স্বীকৃতি লাভ করেছে তথাপি মানবাধিকারের রক্ষাকবচ রূপে এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মানবাধিকার এবং উন্নয়নশীলতার ধারণা দুটির সম্পর্ক যেভাবে স্থাপিত হয়েছিল তাতে শুধুমাত্র পৌর ও রাজনৈতিক অধিকার দুটি প্রাধান্য লাভ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে এর সাথে অর্থনৈতিক অধিকারের ধারণাও সংযুক্ত হয়েছে। এত পেছনে প্রধান কারণ হল ১৯৪৮ সালের মানবাধিকার রক্ষার ঘোষণাপত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ মানবাধিকার রক্ষাকে সমগ্র বিশ্বের দায়িত্ব বলে বর্ণনা করেছে। এর ফলস্বরূপ বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আইনবিধি, প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। যে কোন ধরণের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৌর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বর্ণ-বিদ্বেষী আন্দোলন সমূহ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে ধারণাটি গড়ে উঠেছে তা হল যে কোন অধিকারই সার্বজনীন, অবিভাজ্য এবং সমগ্র বিশ্বের জনগণের পৌর এবং রাজনৈতিক অধিকারসমূহ সার্বজনীনভাবে উন্নয়নের ধারণার সাথে সংযুক্ত।
     ঠাণ্ডা যুগের পরবর্তী সময়ে বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন যে বিশ্বায়ন এবং নয়া উদারনৈতিক ধারণার জন্ম দিয়েছে তা একই সাথে যেমন উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করেছে তেমনি অপরদিকে মানবাধিকারের সমস্যাটিকেও সম্পূর্ণ নতুন ভাবে প্রকাশ করেছে। এই বিশ্বায়নের কারণে একদিকে যেমন আন্তঃ-সীমান্ত সংঘাত দেখা দিয়েছে তেমনি অপরদিকে শুধুমাত্র ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্ব সমাজ ৩৬টি জাতি দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছে যার ফলে এক বৃহৎ সংখ্যক মানুষ স্থানচ্যুত হবে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বায়নের কারণে এক বৃহৎ সংখ্যক মহিলা পুরুষ কর্তৃত্ববাদের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছে। একটি অতি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মানুষ পাচারের সমস্যাটি সাম্প্রতিক বিশ্বে কি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এককথায় বিশ্বায়নের কারণে বিশ্ব সমাজে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দিয়েছে তার সহযোগী ধারণা রূপে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। সুতরাং, বলা যায় একমাত্র স্থায়ী উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমেই প্রকৃত অর্থে বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।
মানবাধিকার ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী
     বিশ্বায়ন প্রসূত উন্নয়নের কর্মসূচীকে যদি প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারে পরিণত করতে হয় তবে অবশ্যই নিম্নলিখিত পদক্ষেপ সমূহ গ্রহণ করা উচিৎ:
     প্রথমতঃ, প্রতিটি রাষ্ট্রে পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে দারিদ্র দূরীকরণ, মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ সংরক্ষণ, জনকল্যাণকামী সরকারের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। UNDP তার ১৯৯৮ সালের নীতি প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার এবং স্থায়িত্বশীল মানবিক উন্নয়নের ধারণা দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু সার্বজনীনতা ও আপেক্ষিকতাবাদের অবসানের কারণে মূল্যবোধের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটেছে তার কারণে উন্নয়নের সুফল মানবিক অধিকার সংক্রান্ত সংরক্ষণের সহায়ক হয়ে উঠেছে।
     দ্বিতীয়তঃ, উন্নয়নের সুফল যদি সমাজের সর্বস্তরে সম্প্রসারিত হতে না পারে তাহলে মানবাধিকার কখনোই প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। দারিদ্র্যতা, নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা, অপুষ্টি ইত্যাদি সকল বিষয়ই প্রত্যক্ষভাবে মানবাধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। একইসাথে উন্নয়নমূলক কর্মসূচী প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা, উন্নয়ন কর্মসূচীর অস্বচ্ছতা, মানবিক স্বাধীনতার সুরক্ষা ইত্যাদি সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।
মূল্যায়ন
     সুতরাং, উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় মানবাধিকার ও স্থায়ী উন্নয়নের ধারণা দুটি পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত। উন্নয়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ ইত্যাদি সুনিশ্চিত হলে তা অনিবার্যভাবে মানবিক অধিকারের ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে। অন্যভাবে বলা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈষম্যের দূরীকরণ না ঘটবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সার্বিক প্রয়াসটি বাস্তবায়িত হবে না। সুতরাং, বলা যায় একমাত্র স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের মাধ্যমেই মানবাধিকারের সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব।
x-----------------------x