Monday, April 27, 2020

POLITICAL SCIENCE-- PROGRAMME COURSE--- 4TH SEM/ SEC

POLITICAL SOCIALIZATION

Political Socialisation
     যে কোন দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বপক্ষে দেশবাসীর মধ্যে সমর্থনসূচক মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ইত্যাদি সৃষ্টি না হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যে পদ্ধতির সাহায্যে একটি দেশের জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করা হয় তা রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ নামে পরিচিত। বস্তুতপক্ষে, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল সেই পদ্ধতি যার দ্বারা রাজনৈতিক সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে থাকে। রাজনীতির দিক থেকে এই প্রক্রিয়াকে দীক্ষিতকরণের প্রক্রিয়া রূপে দেখা হয়।
     সাধারণভাবে বলা হয় “Political socialisation is connected with the learning of political response, of absorbing preferences, and in a sense with the wide problems of allegiance to and alienation from the body politic”অধ্যাপক অ্যালান বলের মতে, “বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মনোভাব এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা ও প্রসারিত করাই হল রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ”। আবার, অধ্যাপক জোহারী বলেন “it refers to the learning process by which norms and behaviour acceptable to a well running political system are transmitted from one generation to another”সিজেলের অভিমত অনুসারে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বীকৃত ও অনুসৃত রীতি-নীতি, মনোভাব এবং আচরণ ক্রমশঃ রপ্ত করার জন্য শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি।
                রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যর সন্ধান পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
     (১) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রকৃতি ও প্রভাব নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বহুলাংশে সময় ও পরিবেশ অনুযায়ী।
     (২) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা প্রবাহিত হয়।
     (৩) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলির প্রকৃতি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতির ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
     (৪) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ সুস্পষ্টও হতে পারে আবার প্রচ্ছন্নও হতে পারে।
     (৫) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব, বয়স ও অভিজ্ঞতার অভাব, আর্থ-সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
     (৬) রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হল একটি সমগ্র জীবন ব্যাপী প্রক্রিয়া।
     রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরস্পরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত। এক্ষেত্রে কতকগুলি মাধ্যম বা সংস্থার ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হল:
     (১) পরিবার: রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের অনন্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিশুর লালন-পালন পরিবারের মধ্যেই সম্পাদিত হয়। শিশুকে সামগ্রিকভাবে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই সমাজব্যবস্থার প্রতি পরিবারের সাধারণ মনোভাব শিশুর মনের ওপর গভীরভাবে রেখাপাত করে। এই কারণে ব্যক্তি মানুষের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে পরিবার কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।
     (২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটি হল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরণের শিক্ষায়তনে প্রাপ্ত মূল্যবোধ ও প্রত্যয় সবসময় সরাসরি রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমর্থনসূচক মূল্যবোধ ও মনোভাব অনুকূল শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা শক্তিশালী হয়। এছাড়াও, বিদ্যালয়ে প্রাপ্ত শৃঙ্খলাবোধ ভবিষ্যতে সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
     (৩) পেশাগত: বর্তমানে সকল দেশেই বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশাগত ভিত্তিতে বিভিন্ন সংঘ-সংগঠন সৃষ্টি হয়। এই সংগঠনগুলির একটি রাজনৈতিক পরিচয় থাকে। স্বভাবতই এই পেশাগত সংগঠনের সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়। এছাড়াও, এই পেশাগত গোষ্ঠীগুলি নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য রাজনৈতিক দলের ন্যায় প্রচারকার্য ও আন্দোলনে লিপ্ত হয়। এর ফলেও এদের সদস্যদের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ ইত্যাদি গড়ে ওঠে।
     (৪) গণ-মাধ্যম: গণ সংযোগের মাধ্যমগুলিও আধুনিক কালে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ও আনুষঙ্গিক ভাষ্য এই সকল গণ-মাধ্যমের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছে যায়। এর ফলে রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জনগণের চেতনা বৃদ্ধি পায় ও তাদের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার মাত্রা প্রসারিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
     (৫) রাজনৈতিক দল: রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক দলগুলি জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক কার্যাবলীর সাথে যুক্ত করে। এর ফলে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং রাজনৈতিক মনোভাব সুদৃঢ় হয়।
     (৬) অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী: রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীগুলিও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীগুলি ব্যক্তি-মানুষের রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করে এবং এখানে গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তির রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
     (৭) ধর্মীয় গোষ্ঠী: রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যায় না। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসমূহ চিরজীবন ব্যক্তির জীবনধারাকে প্রভাবিত করে এবং তাদের রাজনৈতিক মূল্যবোধ গঠনকে প্রভাবিত করে।
     বিভিন্ন মাধ্যমের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেও এর কোন একটিকে প্রধান মাধ্যম রূপে চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং এই সকল মাধ্যমের সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটি পরিপূর্ণতা লাভ করে।
x----------------x