Thursday, April 16, 2020

SEM II (HONS) DSC-3 Rawlsian Theory of Justice

Political Science Honours
Semester-2 /Core-3
Political Theory- Concepts and Debates
Rawlsian Theory of Justice
বর্তমানে একথা অনস্বীকার্য যে কোন রাজনৈতিক ধারণার সুসংবদ্ধ পর্যালোচনাটি ন্যায়বিচারের ধারণাকে বাদ দিয়ে গড়ে উঠতে পারে না। তবে বর্তমানে ন্যায়বিচারের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও আজ পর্যন্ত ন্যায়-বিচারের ধারণার কোন সুসংহত বা সার্বজনীন তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারে নি। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক প্লেটো বা অ্যারিস্টটলের সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত দেখা যায় বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায়বিচারের ধারণাকে পর্যালোচনা করেছেন। সর্বোপরি দেখা যায় যে বর্তমানে একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যাখ্যা ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের ধারণার মধ্যে সংযোগ সাধনের মাধ্যমে এর অর্থকে জটিল করে তুলেছে।
ন্যায়বিচারের উপযোগিতাবাদী তত্ত্ব
ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের সংযুক্তির বিষয়টি সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে উপযোগিতাবাদী দর্শন বিশেষতঃ বেন্থামের চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে। বেন্থাম মূলতঃ যে ধারণার ওপর ভিত্তি করে তার ন্যায়বিচারের তত্ত্বটি গড়ে তুলেছেন সেটি হল “greatest happiness of the greatest numbers” – যা একান্তভাবে একটি উচ্চ মার্গীয় ধারণা। বেন্থামের মতে, ন্যায়বিচার দাবী করে যে আইন বা শাসনব্যবস্থার অবশ্যই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ সমাজের সর্বাপেক্ষা বেশী মানুষের সর্বাধিক সুখ উৎপাদন করা। তবে একইসাথে বেন্থাম রাষ্ট্রে নিরাপত্তা বিধান, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ইত্যাদি আরও কয়েকটি শাসন বিভাগের কার্যের উল্লেখ করেছেন। পরবর্তী সময়ে J.S. Mill বেন্থামের উপযোগিতাবাদী দর্শনের সংশোধন করে ন্যায়বিচারকে কতকগুলি চাহিদার অপর নাম বলে অভিহিত করেছেন। এগুলি, মিল বলেন, সামাজিক উপযোগিতার দিক থেকে সমষ্টিগতভাবে উচ্চ ক্ষেত্রে বিচরণ করে।
রলসের ন্যায় সংক্রান্ত ধারণা
ন্যায়বিচারের উপযোগিতাবাদী তত্ত্বটি সর্বপ্রথম বিরোধিতার সম্মুখীন হল জন রলস-এর বণ্টনমূলক ন্যায়-বিচারের তত্ত্বের মাধ্যমে। রলস তার গ্রন্থ ‘A Theory of Justice’-এ নিজের ন্যায়বিচার তত্ত্বটি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে যার অন্বেষণ করেছেন তা হল অসাম্যভিত্তিক সামাজিক মৌল কাঠামোর অভ্যন্তরে কিভাবে নাগরিক অধিকারসমূহকে বণ্টন করা যেতে পারে। রলস এক্ষেত্রে মনে করেন অজ্ঞতার জগতের বাসিন্দা রূপে মানুষ যদি ন্যায়-বিচারের নীতিগুলিকে খুঁজতে চায় তাহলে তারা কখনোই সর্বোচ্চ উপযোগিতা লাভে সক্ষম হবে না। বরং এসময় তারা নিজেদের সম্ভাব্য সকল অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার প্রয়াসে নিয়োজিত হয়ে পড়বে এবং নিম্নলিখিত নীতি দুটিকে প্রাধান্য দেবে:
(১) অন্যের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করে নিজের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াস; এবং
(২) সমাজের সকল সম্পদ সমাজের প্রতিটি স্তরে সমভাবে বণ্টিত করা।
রলসের মতে এই দ্বিতীয় নীতিটি ‘Maxima Principle’ নামে পরিচিত যার মূল লক্ষ্য সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করা। সুতরাং, এই দ্বিতীয় নীতিটি প্রত্যক্ষভাবে সামাজিক সম্পদের সামগ্রিক বণ্টনের ধারণার সাথে জড়িত।
ন্যায়বিচার সম্পর্কে রলসের তত্ত্বের প্রধান বিষয়টি নিহিত রয়েছে রলস নির্মিত ‘প্রাকৃতিক অবস্থা’ বা ‘Original Position’-এর ধারণা এবং এর ফলস্বরূপ গড়ে ওঠা ‘পার্থক্যমূলক নীতি’ বা ‘Difference Principle’ ধারণা দুটির মধ্যে। রলস মনে করেন, প্রাকৃতিক অবস্থায় ন্যায়বিচার লাভের জন্য ব্যক্তিবর্গ স্বাধীনতা এবং সমতার নীতির ভিত্তিতে পরিচালনা করে। তিনি বলেন এই পরিবেশে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ যুক্তিবাদী স্বাতন্ত্রতার দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিরিখে তারা সামাজিক সম্পদের ওপর বৈধ দাবী প্রতিষ্ঠা করে। রলস আরও বলেন এই প্রাকৃতিক অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলিকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যার প্রধান লক্ষ্য হল নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করা অথবা প্রতিষ্ঠিত নৈতিক মূল্যবোধসমূহকে অস্বীকার করা। সুতরাং, রলস প্রাকৃতিক পরিবেশে দুটি নীতির অস্তিত্বকে স্বীকার করেছেন। এই দুটি নীতি হল:
(১) সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং প্রতিটি ব্যক্তি অপরাপর সকল ব্যক্তির ন্যায় সমান মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করবে।
(২) সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যগুলিকে এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে করে সবচেয়ে কম সুবিধাভোগী শ্রেণী সর্বাধিক সুযোগ লাভ করবে এবং সমতার ভিত্তিতে সকল সরকারী পদ এবং কার্যে সকলের সমান প্রবেশাধিকার থাকবে।
রলসের তত্ত্বের সমালোচনা
ন্যায়বিচার সম্পর্কে রলস যে উদারনৈতিক ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস করেছেন তা আংশিকভাবে কৌশলগত বৈধতার প্রেক্ষাপটে এবং অংশর তার সামাজিক দর্শনের বিষয়সূচীগত কারণে সমালোচিত হয়েছে। এই কারণে দেখা যায় কোন কোন সমালোচক রলসের তত্ত্বকে বৈপ্লবিক সাম্যবাদী তত্ত্ব বলে মনে করলেও কেউ কেউ এটিকে উদারনৈতিক পুঁজিবাদী সামাজিক দর্শনের পুণঃব্যাখ্যা রূপে চিহ্নিত করার পক্ষপাতী। কোন কোন সমালোচক মনে করেন রলস যে পার্থক্যমূলক নীতির ধারণাটি গড়ে তুলেছেন তা কার্যত কল্পবাদী ন্যায়বিচার তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। এই যুক্তির সমর্থনে তারা বলেন যদি অসাম্যকে এই কারণে বৈধ করা হয় যে এটি সর্বাপেক্ষা কম সুবিধাভোগীর কল্যাণ করেছে তবে যৌক্তিক দিক থেকে দরিদ্র ও ধনীদের মধ্যে গড়ে ওঠা অসাম্যকেও মেনে নিতে হয়।
রলসের ন্যায়বিচার তত্ত্বের অপর একটি দুর্বলতা হল তিনি সর্বদাই সর্বাপেক্ষা কম সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণিকে চিহ্নিত করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই প্রতিনিধির চিত্রাঙ্কন করতে গিয়ে তিনি দুটি সংজ্ঞা প্রদান করেছেন যা তার তত্ত্বকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছে। এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেউ কেউ বলেন রলস যেভাবে প্রকৃত কম সুবিধাভোগী শ্রেণীকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন তাতে অনেক সময়ই প্রকৃত পশ্চাদ্পর শ্রেণীর ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারে না। মূলতঃ এই কারণে রলসের ন্যায়বিচার তত্ত্বের অন্যতম নীতি ‘Maximin Principle’-এর সমালোচনা করে রবার্ট নজিক দাবী করেছেন রলস যেভাবে এক শ্রেণীর কাছ থেকে সম্পদ কেড়ে নিয়ে পশ্চাদ্পর শ্রেণীর হাতে ন্যস্ত করতে চেয়েছেন যৌক্তিকতার বিচারে সেটি কখনোই সঠিক নয়। কারণ, নজিক মনে করেন সেই ব্যক্তিই সম্পদ লাভের অধিকারী হন যার সম্পদ অর্জনের যোগ্যতা ও ক্ষমতা রয়েছে।
সর্বোপরি, নারীবাদী দর্শনের অন্যতম প্রবক্তা S.M. Okin দাবী করেছেন রলসের ন্যায়বিচার তত্ত্বের ভিত্তিতে যে আধুনিক উদারনৈতিক সমাজব্যবস্থা চিত্রিত হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে ন্যায়বিচার তত্ত্বের এক লিঙ্গভিত্তিক ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে যেখানে সর্বদাই লিঙ্গগত পার্থক্যের নিরিখে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়।
x----------------x


Qus. Briefly examine M.K. Gandhi’s view on the nature of modern state. Was Gandhi an anarchist? Justify your answer.
বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় চিন্তাবিদদের মধ্যে সম্ভবত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। এর পেছেন প্রধান কারন ছিল গান্ধীজি কখনোই রাষ্ট্রতাত্ত্বিক ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন রাষ্ট্র দার্শনিক যিনি নৈতিকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়সূচীর পর্যালোচনার পক্ষপাতী ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই গান্ধির রাষ্ট্রদর্শন কোন সুসংহত রাজনৈতিক তত্বের জন্ম দিতে পারে নি। প্রকৃতপক্ষে তিনি বাস্তবে যেভাবে রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়সূচীকে পর্যবেক্ষণ করেছেন তার আলোকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি নিজের ধারণা নির্মাণ করেছেন।
রাষ্ট্র সম্পর্কে গান্ধীজি
একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় রূপে রাষ্ট্র সম্পর্কে গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি এর ব্যতিক্রম নয়। নিজের বিভিন্ন রচনায় তিনি কখনোই রাষ্ট্র নাম প্রতিষ্ঠানের গরিমা বৃদ্ধি বা একে বৈধতা প্রদানের প্রয়াস করেন নি। একই সাথে তিনি কখনোই মার্কসবাদীদের ন্যায় রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অবলুপ্তির কথা বলেন নি। তিনি প্রকৃত অর্থে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভারতে রাষ্ট্রের যে রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন তার নিরিখে রাষ্ট্র নাম প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে এক ন্যায়পরায়ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কথা বলেছেন।
গান্ধী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন রাষ্ট্রের উচিৎ জনকল্যানকামী কার্য সম্পাদন করা কারণ রাষ্ট্র হল মানব জাতির উন্নয়ন ও প্রগতিশীলতার মাধ্যম। এমনকি প্রাথমিকভাবে তিনি মনে করতেন ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জনগণের মঙ্গল সাধনে যথেষ্ট আগ্রহী। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার নিরিখে রাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর নিজের ধারণার পরিবর্তন ঘটে। এই সময় থেকে তাঁর দৃষ্টিতে রাষ্ট্র মঙ্গলকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান বলে পরিগণিত হতে শুরু করে। এই সময় থেকে তিনি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: “The state represents an unjust, immoral and violent system”। এই বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত হয়েই গান্ধী এক নৈতিক ও যথার্থ সমাজ ব্যবস্থা দ্বারা রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেন।
রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধ্বংস সাধনের পক্ষে গান্ধীর মত প্রকাশের পেছনে প্রধান কারণ ছিল তিনি মনে করতেন রাষ্ট্র সরাসরি বল প্রয়োগের সাথে যুক্ত। রাষ্ট্র হল অশুভ প্রতিষ্ঠান যা একইসাথে শারীরিক ও আর্থ-সামাজিক হিংসাবোধের জন্ম দেব। প্রকৃতপক্ষে গান্ধীজি মনে করতেন ‘রাষ্ট্র সর্বদাই সুসংহতভাবে হিংসার প্রতিনিধিত্ব করে, রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে তা বলপূর্বক জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়’। স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রীয় আইন অনৈতিক হলেও জনগণ তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। গান্ধীর মতে এই বিষয়টি নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রের হিংসামূলক ও অনৈতিক চরিত্রটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি আরোও বলেন রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগ পদ্ধতিটি যেহেতু বলপ্রয়োগের উপর নির্ভরশীল সেহেতু এটি কখনোই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। কারণ, ন্যায় বিচার ও হিংসা সর্বদাই পরস্পর সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে গান্ধী বলেন, একজন ব্যক্তি বিবেক সম্পন্ন হওয়ার কারণে তার সংশোধন সম্ভব নয়।
গান্ধী অপর একটি কারণেও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। গান্ধীর দৃষ্টিতে রাষ্ট্র সর্বদাই গণতন্ত্রের বিরোধী এবং এটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে। এই প্রসঙ্গে গান্ধী বলেন রাষ্ট্র সর্বদাই ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও চূড়ান্ত সার্বভৌমিকতার ধারণায় বিশ্বাস করে এবং এই কেন্দ্রীকরণ একটি অগণতান্ত্রিক ধারণা। একইসাথে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার অদিক থেকেও বলা যায় রাষ্ট্র হল একটি গণতন্ত্রবিরোধী ধারণা। সর্বোপরি গান্ধী মনে করতেন রাষ্ট্র সর্বদাই নিজের ইচ্ছা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয় যা কার্যত ব্যক্তির সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে।
তবে এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন গান্ধি রাষ্ট্র ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করলেও তিনি কখনোই ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদানের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন নি। এই কারণেই তাঁর আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার কল্পনায় গান্ধী রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্রের ধারণাটিকে তুলে ধরেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর মত হল “That government is best, which governs the least”। সুতরাং, গান্ধীর দৃষ্টিতে আদর্শ সমাজ ব্যবস্থায় কোন সরকার বা রাষ্ট্র থাকবে না এবং রাষ্ট্রীয় আইনের পরিবর্তে সেখানে বিরাজ করবে বিবেকের অনুশাসন। এই সমাজ ব্যবস্থায় জনগণ হবে আত্মনিয়ন্ত্রিত এবং এটি হবে আত্ম-নির্ভরশীল ও বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থা যেখানে জনগণ তাদের বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবে। অর্থাৎ, গান্ধী সেই সমাজ ব্যবস্থার কল্পনা করেছেন যেখানে ব্যক্তিবর্গ বল প্রয়োগের দ্বারা নয়, স্বেচ্ছামূলক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরস্পরের সাথে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে যাকে গান্ধী ‘Enlighten Anarchy’ বলে অভিহিত করেছেন।
গান্ধী কি নৈরাজ্যবাদী ছিলেন?
রাষ্ট্র সম্পর্কিত গান্ধীর মতবাদটি পর্যালোচনা করে কেউ কেউ গান্ধীকে নৈরাজ্যবাদী চিন্তাবিদ বলে অভিহিত করেছেন। কারন নৈরাজ্যবাদীদের ন্যায় তিনিও রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ ধ্বংস সাধনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে গান্ধীকে কখনোই প্রুধো, বাকুনিন বা ক্রপোৎকিনের ন্যায় চরম নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক বলা যায় না, বরং তাঁর চিন্তাধারার সাথে গড্উইন, তলস্তয়ের ন্যায় মানবতাবাদী নৈরাজ্যবাদী তাত্ত্বিকদের অধিক সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে ডঃ বিনয় সরকার বলেন, ‘গান্ধীর চিন্তাধারায় নৈরাজ্যবাদ ও অহিংসার ধারণার সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়’। একই ভাবে ডঃ গোপীনাথ ধাওয়ান বলেন, ‘গান্ধী প্রকৃত অর্থে নৈতিক নৈরাজ্যবাদী চিন্তাধারা গড়ে তুলেছিলেন’।
গান্ধীকে নৈতিক বা মানবতাবাদী নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক বলার পেছনে প্রধান কারণ হল তিনি চরম নৈরাজ্যবাদীদের ন্যায় যে কোন ধরণের কর্তৃত্বের বিরোধিতা করেন নি, তিনি কেবল রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছিলেন কারণ এটি যেহেতু একটি বল প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু একইসাথে একটি অহিংস স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বিবেকের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলেন যা চরম নৈরাজ্যবাদীদের ধারণায় লক্ষ্য করা যায় না। সর্বোপরি, তিনি কখনোই চরম নৈরাজ্যবাদীদের ন্যায় সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ধ্বংস সাধনকে সমর্থন করেন নি।
সুতরাং, উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় আপাত দৃষ্টিতে গান্ধীকে নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক বলে মনে হলেও তিনি কখনোই নৈরাজ্যবাদী ছিলেন না। তিনি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার কথা বললেও একইসাথে অন্য একটি কর্তৃপক্ষের হাতে শাসন ক্ষমতা অর্পণ করতে চেয়েছেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন “There are many things which individual cannot do alone, but here he requires an authority”। গান্ধীর এই ধারণা থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় তিনি রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানের নৈতিক সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা চরম নৈরাজ্যবাদীদের ধারণায় পরিলক্ষিত হয় না। সুতরাং, এদিক থেকে তলস্তয় বা গড্উইনের ন্যায় গান্ধীকেও দার্শনিক বা মানবতাবাদী নৈরাজ্যবাদী তাত্ত্বিক বলে অভিহিত করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
x----------------x