Tuesday, April 28, 2020

Political Science-- Programme ourse-- G II/ 6th Sem


Gandhi's conomic Ideas in reference to Trusteeship


Qus. Discuss Gandhi’s economic ideas with reference to his concept of trusteeship.
                বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাক্ষেত্রের সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী আদর্শ ভারতীয় সমাজ গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিষয়সূচীর পাশাপাশি অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। গান্ধীর অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম ভিত্তি। সত্য ও অহিংসার ধারণা থেকে অবিচ্ছেদ্য হলেও গান্ধী তাঁর অর্থনৈতিক ধারণা কখনোই সুসংহতভাবে গড়ে তোলেন নি। অহিংসা ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে একটি আদর্শ সমাজ নির্মাণের ভিত্তি রূপেই তিনি অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর অর্থনৈতিক চিন্তাধারার অপর একটি লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে সকলের উন্নতি বিধান ও সামগ্রিক গ্রামীণ সমাজের পুনর্গঠন করা।
     গান্ধীর মতানুসারে যে কোন অর্থনৈতিক কার্যাবলী কোন বিচ্ছিন্ন আভরণ না হওয়ার কারণে এর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় এক নৈতিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন “That economy is untrue which disregards moral values”। এই কারণেই নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে গান্ধী নিজের অর্থনৈতিক ধারণা গড়ে তোলার প্রয়াস করেছেন।
পাশ্চাত্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে গান্ধীর ধারণা
     একটি নৈতিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গান্ধী পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণা থেকে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, শিল্পায়ন এবং বস্তুগত উন্নয়নের ধারণাগুলিকে অস্বীকার করে বলেন এগুলি কখনোই মানবিক উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। তাঁর দৃষ্টিতে উন্নয়নের ধারণাটি সর্বদাই আধ্যাত্মিক বা মানসিক আত্মোপলব্ধির সাথে সংযুক্ত এবং এই ধারণা দ্বারা পরিচালিত হয়ে তিনি বলেন পাশ্চাত্য বস্তুবাদী সভ্যতা কার্যত ব্যক্তির নৈতিক উন্নয়নকে অস্বীকার করেছে। সুতরাং, এদিক থেকে বলা যেতে পারে, গান্ধীর অর্থনৈতিক দর্শন পাশ্চাত্যের মূল্যবোধ এবং পৌর সমাজের বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে জন্মলাভ করেছে।
     পাশ্চাত্য সমাজব্যবস্থার প্রতি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা বস্তুগত উৎকর্ষতার উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে এবং এই কারণে এর প্রধান ভিত্তি হল বস্তুগত লোভ ও শোষণ। একইসাথে তিনি বলেন এই পাশ্চাত্য শিল্পভিত্তিক সভ্যতা ব্যক্তিকে অর্থ ও যন্ত্রের ক্রীতদাসে পরিণত করে। এই বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন কোন সভ্যতাকে তার অর্জিত বস্তুগত উন্নতি দ্বারা বিচার করার পরিবর্তে এটি কতখানি নৈতিক উৎকর্ষতা অর্জন করতে পেরেছে তার ভিত্তিতে বিচার করা উচিৎ।
পাশ্চাত্য উৎপাদন ব্যবস্থা ও গান্ধী
     পাশ্চাত্য যন্ত্রসভ্যতার সমালোচনার পাশাপাশি গান্ধী পাশ্চাত্য উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তিগত কাঠামোর তীব্র সমালোচনা করেছেন। গান্ধীর মতে পাশ্চাত্য সভ্যতার উৎপাদনের দুটি ভিত্তি হল শিল্পায়ন ও ভারী যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার। তাঁর মতে শিল্পায়ন সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং শোষণ প্রক্রিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করে। অনুরূপভাবে, ভারী বা বৃহৎ যন্ত্রের ব্যবহার ব্যক্তিসত্তা এবং আত্মনির্ভরশীলতার ধারণা দুটিকে বিনষ্ট করে ব্যক্তিকে পরনির্ভরশীল বা ক্রীতদাসে পরিণত করে। এর পাশাপাশি গান্ধী উল্লেখ করেছেন যে ভারতের ন্যায় একটি শ্রমিক উদ্বৃত্ত অর্থনীতিতে ভারী যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার শ্রমিকদের কর্মচ্যুত করে কর্মহীনতা বা বেকারত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন গান্ধী কখনোই সামগ্রিকভাবে শিল্পায়ন বা যন্ত্রের বিরোধিতা করেন নি। তিনি কেবলমাত্র এদুটি দ্বারা সৃষ্ট সম্পদের কেন্দ্রীকরন এবং ব্যক্তির মর্যাদা হ্রাসের বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন। সর্বোপরি, তিনি শিল্পভিত্তিক পুঁজিবাদী সমাজের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি সাম্যভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও গান্ধী
     গান্ধীর অর্থনৈতিক চিন্তাধারার অপর একটি দিক ছিল পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী সমাজ সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মনোভাব। তাঁর মতে, এটি কখনোই উৎপাদন ও বণ্টনের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হতে পারে না কারণ এটি শোষণ ও হিংসার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল অসাম্য এবং সম্পদের একত্রীকরণ যা নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক চৌর্য বৃত্তির সমরূপ। কারন উৎপাদন ব্যবস্থা ও এর উৎপাদনসমূহ চরিত্রগতভাবে সামাজিক হলেও পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এদের ওপর মুষ্টিমেয় ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গান্ধী চৌর্যবৃত্তি বলে অভিহিত করেছেন কারণ এখানেও জমির ওপর ভূস্বামীগণ অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। মূলতঃ এই কারণে গান্ধী পাশ্চাত্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে ভারতীয় সমাজে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
     গান্ধীজীর মতে, ভারতীয় সমাজের এই বিকল্প অর্থনীতির ভিত্তি হবে নৈতিকতা ও ন্যায় বিচার। বস্তুগত সুবিধার পরিবর্তে সকলের জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠা হবে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও শ্রমের মর্যাদা। এরূপ সমাজের চিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে গান্ধী এক বিকেন্দ্রীকৃত গ্রামীণ অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা বলেছেন যা একইসাথে ব্যক্তি ও গ্রামীণ সমাজে আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি রচনা করবে। এই আত্মনির্ভরশীলতার ধারণাটি গান্ধী তলস্তয়ের “Bread Labour”-এর ধারণার অনুকরণে গড়ে তুলেছেন যার মূল লক্ষ্য সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি যাতে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করা। এছাড়াও রাস্কিনের প্রয়োজনমূখী উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন ও চাহিদা হ্রাসের ধারণা দুটির প্রভাব গান্ধীর অর্থনৈতিক ধারণায় প্রতিফলিত হয়েছে।
গান্ধীর অছি ব্যবস্থার ধারণা
     আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গান্ধী যে পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তার জন্য তিনি কখনোই শ্রেণী সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করেন নি। কারন তিনি মনে করতেন হিংসা ও অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে বলে শ্রেণী সংগ্রাম কখনোই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তিনি আরও মনে করতেন শ্রেণী সংগ্রাম হল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের নামান্তর মাত্র এবং এই কারণে এটি সর্বদাই পরিহার করা উচিৎ। এই চিন্তাধারার বশবর্তী হয়ে গান্ধী বলেন মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর সম্পর্ক, সামন্ত প্রভু ও কৃষকের সম্পর্ক ইত্যাদি কখনোই সংঘাতপূর্ণ নয়, বরং তারা পরস্পর নির্ভরশীল। যেহেতু এই সমাজ ন্যায় বিচারের ধারণা দ্বারা নির্ধারিত হয় নি সেহেতু এক্ষেত্রে যা প্রয়োজন তা হল বল প্রয়োগ না করে তাদের মধ্যে এক ন্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। এই পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে গান্ধী তাঁর ‘অছি ব্যবস্থার’ তত্বটি নির্মাণ করেছেন। গান্ধীর মতে এটি হল প্রতিষ্ঠিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের অহিংস পদ্ধতি। অছি ব্যবস্থার ধারণা অনুসারে মুনাফা যেহেতু একটি সামাজিক বিষয় সেহেতু এর উপর ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠা ন্যায়সঙ্গত নয়। শিল্প মালিক বা সামন্ত প্রভুর অবশ্যই মনে রাখতে হবে তারা হল সামাজিক সম্পদের অছি মাত্র এবং এই কারণে সামাজিক সম্পদ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা তারে সমাজের সকল সদস্যের সাথে ভাগ করে নেবে। তিনি মনে করেন এই অছিদের কখনোই সেই সম্পদ নেওয়া উচিৎ নয় যেখানে তাদের শ্রম মিশ্রিত হয় না। অর্থাৎ, গান্ধীর অছি ব্যবস্থার ধারণার কেন্দ্রীয় বিষয় হল পুঁজিপতিদের স্বেচ্ছা প্রণোদিত আত্মশুদ্ধি দ্বারা তাদের সম্পূর্ণ মানসিক পরিবর্তন। গান্ধীর অছি ব্যবস্থা সংক্রান্ত ধারণাটির নিম্নলিখিত ভিত্তিগত ধারণা লক্ষ্য করা যায়:
     (১) কোন ব্যক্তিই নিজস্ব দুর্বলতা ছাড়া স্বাধীনতা হারায় না। তিনি বলেন শ্রমিক, কৃষক, উভয়েই তাদের প্রচ্ছন্ন সম্মতির কারণে শোষিত হয়। শ্রমিক বা কৃষক শ্রেণী যদি সহযোগিতা করতে অসম্মত হয় তবে নিশ্চিতভাবে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে এবং এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী বা সামন্ত শ্রেণি শোষিতদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হবে। সুতরাং, গান্ধীর মতে নিজেদের শক্তি সম্পর্কে চেতনা বৃদ্ধিই একমাত্র শ্রমিকদের উন্নতি বিধান করতে পারে।
     (২) গান্ধীর অছি ব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি অনুসারে যেহেতু শ্রম হল প্রকৃত পুঁজি সেহেতু শ্রমিক শ্রেণীই হল পুঁজির প্রকৃত মালিক।
     (৩) অছি ব্যবস্থার তৃতীয় ভিত্তিটি হল অর্থবান শ্রেণীকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে বাস্তবে তাদের সকল সম্পদের মালিক হল সমাজ। সুতরাং, তাদের অবশ্যই সমাজের সকল সদস্যের সাথে এই সম্পদ বণ্টন করে নিতে হবে, অন্যথায় জনগণ তাদের সাথে অসহযোগিতা করবে।
     সুতরাং, বলা যায় গান্ধীর অছি ব্যবস্থার ধারণার প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হল শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পদ্ধতির সাহায্যে সামাজিক সম্পদের পুনর্বণ্টন। গান্ধীর এই অছি সংক্রান্ত ধারণাটি চূড়ান্ত নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত সমালোচনা পরিলক্ষিত হয়।
     মানবেন্দ্রনাথ রায় গান্ধীর অছি ব্যবস্থার সমালোচনা করে এটিকে কাল্পনিক ধারণা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন এটি কার্যত পেটি-বুর্জোয়া মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। হীরেন মূখার্জী বলেন গান্ধীর এই ধারণাটি একান্তভাবে অবাস্তব ধারণা যা শুধুমাত্র স্বর্গীয় পরিস্থিতিতে অর্জন করা সম্ভব হয় কারণ কোন ব্যক্তিই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ সম্পদের ওপর থেকে অধিকার ত্যাগ করবে না। অবশ্য গান্ধীর অছি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা তীব্র সমালোচনা করেছেন ই.এম.এস. নাম্বুদরিপাদ। তার মতে, গান্ধীর অছি সংক্রান্ত ধারণাটি বুর্জোয়া কর্তৃত্বের প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করে পুঁজিবাদকে এক নতুন জীবন প্রদান করেছেন। তবে এই সমালোচনার প্রত্যুত্তরে বলা যায় গান্ধী কখনোই আশা করেন নি যে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থায় তাঁর অছি সংক্রান্ত ধারণা গড়ে তোলা সম্ভব। বরং এই ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি সত্যাগ্রহী সমাজ গঠনের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন সত্যাগ্রহী সমাজে যখন প্রতিটি ব্যক্তি তার চিত্ত শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে হয়ে উঠবে এক একজন সত্যাগ্রহী একমাত্র তখনই অছি ব্যবস্থা সার্থক রূপ লাভ করবে। সুতরাং, গান্ধীর অছি ব্যবস্থা গঠনের অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত হল সত্যাগ্রহী সমাজের প্রতিষ্ঠা।
x----------------x