Sunday, May 10, 2020

6th sem honours Topic - Supermind by Sri Aurobindo

                        অতিমানস (Supermind)
                                  শ্রীঅরবিন্দ       
 শ্রীঅরবিন্দ মনে করেন,অতিমানস স্তর স্বতঃই সত্যের অধিকারী।এর জ্ঞান সত্যেরই জ্ঞান---- কেবল মানসিক জ্ঞানের মত ছবি বা চিহ্ন নয়।সাধারণ মন ও অতি মানসের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায় আছে,যাদের মধ্য দিয়ে অতিমানস,সাধারণ মনে নেমে আসতে পারে এবং সাধারন মনও ক্রমশ অতিমানসের উচ্চস্তরে আরোহন করতে পারে।এটাই বিবর্তনের নিয়ম। সাধারণ চেতনার ঊর্ধ্বে উচ্চতর মানসিক চেতনার যে স্তর আছে তা মাঝে মাঝেই সাধারন চেতনাতে বোঝা যায়।কোন একটি সমস্যা সম্বন্ধে চিন্তা করলে মনে হয় হঠাৎ কোথা থেকে সমাধানের চিন্তা এসে পড়লো।সাধারন মানুষের মধ্যে এমন অনেকে আছেন,যাদের কোন বিষয় বুঝতে অনেক সময় লাগে বা কষ্ট করতে হয়।আবার কেউ কেউ আছেন,ঐ বিষয় খুব দ্রুত আয়ত্ত করে ফেলেন।ধীশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের মানসিক ক্ষিপ্রতা ও স্বচ্ছতা সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। কবি বা গূঢ়বাদীর অনুভূতি অতি উচ্চস্তরের চেতনা। এইসব উচ্চ চেতনার সঙ্গে সম্যক পরিচিতি হতে গেলে প্রথমে বাহ্য চেতনা থেকে সরে এসে অন্তর্মুখী হয়ে আমাদের গূঢ় চৈত্য পুরুষ,আন্তর মন,আন্তর  প্রাণ ও আন্তর সূক্ষ্ম শরীরের সন্ধান পেতে হবে।
  প্রখরতার তারতম্য হেতু স্তরগুলি উচ্চ বা নিম্ন।সাধারণ মানস চেতনার ঊর্ধ্বে আছে 'উত্তর মানস'।এতে সাধারণ মনের মত সত্যের অন্বেষণ করতে হয় না।এই স্তরের চিন্তার মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্যকে প্রত্যক্ষ করে ব্যক্তি।এই অবস্থাকে বলা হয় দিব্য-মনন বা সত্য চিন্তন। কিন্তু এর চেয়ে আরো দীপ্ত চেতনা হলো 'দীপ্ত মন' বা প্রবুদ্ধ মানস' যাকে Illumined Mind বলেছেন শ্রীঅরবিন্দ।এই স্তরের শক্তি ও প্রখরতা অনেক বেশি।এইস্তরকে বলা হয় সত্য ও প্রাণ।বৈদিক ঋষিদের নিকট 'সূর্য' সত্যের প্রতিমূর্তি। সেইভাবে বলা যায়, উত্তর মানস স্থির সূর্যলোক এবং দীপ্ত বা মানুষের ঊর্ধ্বে জলন্ত সূর্য সত্তার পুঞ্জিভূত রশ্মিরাশি।
  এই স্তরের ঊর্ধ্বে সত্যশক্তির আরও মহত্তর শক্তি আছে।একে বলা হয় বোধি বা প্রজ্ঞা। যাকে শ্রী অরবিন্দ বলেছেন ''Intuition''। এই বোধই হলো নিবিড় ও নির্ভুল সত্যদৃষ্টি, সত্যচিন্তন, সত্য অনুভূতি ও সত্যক্রিয়া।প্রজ্ঞা বোধির উৎসস্থলে আছে 'অধিমানস' যা অতিমানস ঋত্ চেতনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু এই স্তরেও হৃদয় অধিমানসের 'হিরণ্ময় পাত্র' দ্বারা ঋত চেতনার মুখ আচ্ছাদিত থাকে।অধিমানস পরার্ধ ও অপরার্ধে সংযোগসূত্র এবং অজ্ঞান ও অবিদ্যার মধ্যে অতিমানস চেতনার প্রতিভূ।
  অতিমানসের চেতনা অখন্ড, এতে বিষয় সমূহের মূল্য সত্য, সমগ্র সত্য এবং প্রতিব্যাষ্টি রূপের সত্য একক, এক অবিভাজ্য ঐক্যের সূত্রে গঠিত। কিন্তু অধিমানসের অখন্ডতা নেই। এর মূল সত্য,সমগ্র ব্যষ্টি সত্য।এমনকি এদের একত্ব সম্বন্ধ অবগত। কিন্তু এতে নেই অবিভাজ্য চেতনা। অধিমানসের একান্ত জ্ঞান এবং কেন্দ্রীভূত স্থায়ী চেতনা নয় বা এর কার্যাবলীর ভিত্তি নয়। এখানে এক একটি শক্তি বা দিক পৃথকভাবে নিয়ে, সেই জ্ঞানকে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিকশিত করে।
অতিমানস চেতনায় পুরুষ ও প্রকৃতি, চিদ্ ও শক্তি ----একেই সমগ্র সত্য। কিন্তু অধিমানস চেতনায় এরা পৃথক। এক সমগ্র বহুমুখী সত্তা, বহু দিকে ভাগ হয়ে এক একটি ভাগ, নিজের নিজের ধারা অনুযায়ী বিকশিত হয়।একই চেতনার লক্ষ ধারায় খণ্ডিত হয় এবং প্রতিধারা নিজের নিজের সার্থকতার সন্ধান করে। এইভাবে অধিমানস এক সচ্চিদানন্দকে অনন্ত সম্ভাবনার রূপ দেয়। যাতে অনন্ত জগত সৃষ্টি হতে পারে।
  এই  অতিমানসিক স্তরে সব বিজ্ঞানময় পুরুষ যে একই ধরনের হবে-এমন নয়।সকল বৈচিত্রের মূলে এক ---- এই সত্যই অতিমানসের সত্য।
  সুতরাং অতি মানসিক জীব বিভিন্ন হলেও একাত্ম বজায় রাখবে।চেতনার প্রতি কেন্দ্রে,প্রাণের প্রতি স্পন্দনে,দেহের প্রতি কোষে সে অনুভব করবে ভগবত উপস্থিতি।তার কাছে সকল জীবই নিজের আত্মা। সে একাধারে ভগবানের ব্যষ্টি, সমষ্টি এবং বিশ্বাতীত রূপ।নিজে থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্বের সঙ্গে তাঁর চেতনা, সংকল্প এবং কার্যের সঙ্গতি থাকবে।
 আমাদের অবিদ্যাই বিরোধের মূল কারণ।অহং বশে আমরা নিজেরা জীবনের মূল দাবি মেটাতে চাই, কিন্তু অতি মানসিক স্তরে জীবের অহংবোধ নেই।'অবিদ্যা বহির্ভূত ঋতম জ্যোতির শক্তিতে শক্তিমান।সে যেমন নিজের মধ্যে চিৎপুরুষের আত্মপ্রকাশের আনন্দ উপলব্ধি করবে,তেমনি সকলের মধ্যে চাইবে ভগবানের আনন্দ। ক্ষুদ্র আশা বা কামনা,তাদের তৃপ্তি বা ব্যর্থতার স্থান অতিমানসিক স্তরে নেই।
 অতিমানসিক জীবনে পাপ-পূণ্যের স্থান নেই। সুতরাং সেখানে নীতির প্রশ্ন নেই। তাঁর কার্য ও জীবন - তাঁর নিজেরই প্রকাশ।অবিদ্যা ও অহং না থাকলে কোন মিথ্যাচারণ বা অন্যায় ব্যবহার সম্ভব নয়।অবিদ্যাময় মানসিক জীবনে সত্য অজানা ----- তাই এ স্তরে সত্য সন্ধান করতে হয়। কিন্তু দিব্য জ্ঞানময় অতিমানসিক স্তরে কেবল সত্যেরই প্রকাশ। সত্য কি তা জীব উপলব্ধি করে এবং পরা প্রকৃতির ইচ্ছাই তার কার্য।
 শ্রীঅরবিন্দের অতিমানস উপলব্ধির প্রেক্ষাপটে মনোবিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর চিন্তাবিদদের উপলব্ধিও সহায়ক ----- বিশেষ করে গেষ্টাল্ট মতবাদিদের শিক্ষাতত্ত্ব।সেখানে বলা হয়েছে-----শিক্ষা একান্তভাবেই স্বজ্ঞাজাত এক অন্তর্দর্শন মাত্র।যদিও আপাতদৃষ্টিতে শ্রীঅরবিন্দের দার্শনিক ভাবনার সঙ্গে এই তত্ত্বের কোন সরাসরি সম্পর্ক আমরা দেখতে পাই না,কিন্তু একটা মৌলিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।তাহল - শিক্ষা নেহাতই যান্ত্রিক 'চেষ্টা ও ভুল সংশোধন' মাত্র নয়।এটি 'সহজাত অন্তর উদ্ভাবন'। অতিমানসের আলোচনায় শ্রীঅরবিন্দ এই অন্তরের উদ্ভাসিত অবস্থার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে মনে হয়।
                                      -----------