Tuesday, May 19, 2020

6th sem honours Integral Yoga by Sri Aurobindo

অখন্ড যোগ (Integral Yoga):
   দিব্য জীবন হলো বিবর্তনের চরম লক্ষ্য।কিন্তু এই দিব্য জীবনকে কিভাবে আমরা পৃথিবী নিয়ে আসব? শ্রীঅরবিন্দ অনুভব করেছিলেন জগতের বুকে একদিন দিব্য জীবন নেমে আসবেই, হয় দ্রুত অথবা বিলম্বিত হতে পারে,তবে আধ্যাত্মিক কার্যক্রম এই অবতরণকে দ্রুত কার্যকরী করতে সমর্থ। কিন্তু কিভাবে কত নির্দিষ্ট ও দ্রুতভাবে এটা সম্ভব?
 শ্রীঅরবিন্দের উত্তর হল এটা করা সম্ভব 'যোগ' এর মাধ্যমে।শ্রীঅরবিন্দ যেভাবে যোগের প্রকৃতিকে বুঝেছেন তার বিস্তারিত ও সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা এখানে দেওয়া সম্ভব নয় এ জন্যই যে প্রথমতঃ এই ব্যাখ্যা বিশাল হবে, এবং দ্বিতীয়তঃ অনিবার্যভাবে 'তন্ত্রে'র উপর নির্ভরশীল।যা এই দার্শনিক আলোচনা পরিসরের বাইরে। এখানে কেবল শ্রীঅরবিন্দের অখন্ড যোগের দার্শনিক আলোচনা করা যেতে পারে।
অখন্ড যোগের লক্ষ্য:
    যোগ শব্দের সাধারণ অর্থ যুক্ত হওয়া। পতঞ্জলি যোগ শব্দটিকে সাধারণ অর্থে ব্যবহার করেননি।পতঞ্জল ঈশ্বরকে স্বীকার করলেও তার যোগসূত্রে 'ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে' যোগ বলেননি।যোগের লক্ষন প্রসঙ্গে পতঞ্জল বলেছেন বলেছেন 'যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধ' অর্থাৎ যোগচিত্তবৃত্তির নিরোধ। বুদ্ধি অহংকার মন এই তিনটি তত্ত্বকে যোগ দর্শনে 'চিত্ত' বলা হয়েছে। এই চিত্ত যখন কোন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন চিত্ত সেই বিষয়ের আকার গ্রহণ করে। চিত্তের বিষয়াকার  গ্রহণণই চিত্তবৃত্তি। যেমন ইন্দ্রিয় মনের মাধ্যমে চিত্র যখন ঘটের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তখন চিত্ত ঘটের আকার গ্রহণ করে অর্থাৎ চিত্তের ঘটাকারবৃত্তি হয়। চিত্তের বৃত্তি হল এই প্রকার জ্ঞানরূপ অবস্থাসকল। আত্মা স্বরূপতঃ বিশুদ্ধ চেতন্য, তাহ চেতন্যের বিকার সম্ভব নয়। সুতরাং চিত্তে প্রতিবিম্বিত আত্মারই বিকার হয়।চিত্তে প্রতিবিম্বিত আত্মাই অবিদ্যাবশত নিজেকে ওইসব বৃত্তিজ্ঞানের জ্ঞাতা, কর্তা ও ভোক্তা বলে মনে করেন। এই অবস্থাই হচ্ছে আত্মার বদ্ধাবস্থা।বদ্ধাবস্থায় আত্মা পঞ্চক্লেশে ক্লিষ্ট হয়, এরূপ বন্ধন মুক্তির জন্যই চিত্তবৃত্তি নিরোধের প্রয়োজন। চিত্তবৃত্তি নিরুদ্ধ হলে চিত্ত সম্পূর্ণরূপে বৃত্তিহীন রূপে অবস্থান করে।চিত্তের এই অবস্থাই 'সমাধি' বা যোগা।কারণ চিত্তবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে নিরুদ্ধ হলে প্রকৃতির সঙ্গে পুরুষের বা আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন হয় এবং আত্মা স্বরূপে অবস্থান করে।এই অবস্থাই হচ্ছে মুক্তি বা কৈবল্যের  অবস্থা।
    শ্রীঅরবিন্দের 'অখন্ড যোগ' কিন্তু পতঞ্জলের 'যোগ' থেকে নানা দিক থেকে পৃথক। এই পার্থক্য গুলি হল:
 প্রথমতঃ আমরা বলতে পারি অরবিন্দের যোগ সমন্বয় হল ফলের সমন্বয়।আর পতঞ্জলের যোগ সমন্বয় হল পদ্ধতির সমন্বয়। শ্রীঅরবিন্দ হঠযোগের অভ্যাস বাধ্যতামূলক করেননি।তার পদ্ধতিতে - যদিও তার ফলাফল পাওয়া যায় তার পদ্ধতিতে।
 দ্বিতীয়তঃ পতঞ্জলির মতে ঈশ্বর উপলব্ধির একমাত্র উপায় আত্মোপলব্ধি এটাই চরম লক্ষ্য।কিন্তু শ্রীঅরবিন্দের মতে ব্যক্তির আত্মউপলব্ধি বিশ্বচেতনার উপলব্ধির থেকে নিম্নমানের।
 তৃতীয়তঃ পতঞ্জলির মতে,আত্মউপলব্ধিতে তুরীয় অবস্থায় কোন বিষয়ের চেতনা থাকে না।এটি অন্য তিনটি চেতনার নিম্ন অবস্থা,যথাক্রমে জাগ্রত, স্বপ্নময়, এবং স্বপ্নহীন অবস্থা থেকে পৃথক।যখন কোনো ব্যক্তি তুরীয় চেতনার অবস্থা থেকে জেগে ওঠে এবং ফিরে আসে জাগ্রত অবস্থায়,তার সমাধি ভেঙে যায়।তখন আত্মা মানসিক অবস্থার দ্বারা নিজেকে চিহ্নিত করে।তাই আত্মোপলব্ধি কেবল সম্ভব সমাধির অবস্থাতেই।
 কিন্তু শ্রীঅরবিন্দের মতে সমাধি চরম লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অপরিহার্য নয়। যেটা অত্যন্ত প্রয়োজন,তাহল জাগ্রত চৈতন্যের রূপান্তর।এটা ছাড়া যোগ কখনো চরম ফল প্রদান করতে পারেনা।

 চতুর্থতঃ শ্রী অরবিন্দ বলেছেন,যোগ ব্যক্তিকে তৈরি করে উপরের দিব্য চিৎ শক্তিকে গ্রহণের উপযোগী করে,মানুষকে হতে হবে দিব্য শক্তিকে গ্রহণের আধার মাত্র।এর জন্য নিজের আমিত্বকে সম্পূর্ণ বর্জন করাই প্রাথমিক পদক্ষেপ। যদি এই পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা হয়,তবেই এই পৃথিবী অতিমানসের অবতরণ ঘটবে, এবং ক্রমে এক দিব্য মানবসমাজের উদ্ভব ঘটবে।
                                      ---------