Friday, May 1, 2020

6th sem honours (The infinite aspect of Man's Nature by Rabindranath Tagore)

মানব প্রকৃতির অসীম সত্তার দিক(The infinite aspect of Man's Nature):
     মানব প্রকৃতির অসীম সত্তার দিকটিকে নানাভাবে কবিগুরু ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর দর্শনে।কখনো বলেছেন এটি মানুষের মধ্যে 'বিশ্বপ্রকৃতি' কখনো বলেছেন মানুষের মধ্যে উদ্বৃত্ত, আবার কখনো বলেছেন মানুষের মধ্যে 'দেবত্বশক্তি' ।তিনি এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন যে, মানবপ্রকৃতির এইদিকে সঠিকভাবে নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল,কিন্তু তিনি জীবনের নানা অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বিষয়টিকে বোঝাতে চেয়েছেন।যখনই কোন কিছু 'ভালো' আমরা করতে চাই, এবং তার জন্য দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে চাই এবং ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকি,তখনই আমাদের মধ্যে এই 'দেবত্বে'র উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
     মানব সত্তার অসীমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সে ক্রমাগত নিজের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে যেতে চায়।কোন কিছুই তার উদ্যমকে দমিয়ে রাখতে পারেনা পরিণামে।এমন কোন কাজ নেই যা সম্পূর্ণ অসম্ভব মানুষের কাছে।সে বারে বারে চেষ্টা করে,বিফলও হয়, কিন্তু তার বিফলতাও  তার কার্যক্রমকে পুনরায় সচেষ্ট করে তোলে।এই 'অতিরিক্ত' জীবনীশক্তিই প্রকৃতপক্ষে মানুষের উদ্যম।এটাই তার মধ্যে এমন এক অনুভূতি সৃষ্টি করে যা তার লক্ষ্যকে উচ্চতর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে-----এটাই মানুষকে আপন সাধারণ সত্তার ঊর্ধ্বে উঠতে সাহায্য করে।
     এই অসীম প্রকৃতির জন্যই মানুষ মুক্তি অথবা অমরতা জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে।অন্য কোন জীবের মধ্যে অমরতার জন্য এই আকুলতা নেই। কিন্তু মানুষের মধ্যে কোন ভাবেই এই অনুভুতির জন্ম হয়েছে। যদিও তার অভিজ্ঞতা আছে মৃত্যুর, তবু সে অনুভব করে মৃত্যুই জীবনের শেষ নয়। তাই তার জীবনের নানা দিকের ভিত্তি এই বোধ।রবীন্দ্রনাথ নিজেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন এবং তার উত্তরও নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন মানুষের মধ্যে কোন চেতনা তাকে অমরতা লাভের জন্য চালিত করে  যদিও সে জানে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ঘটনা, এটা তার দেহ নয় অথবা মানসিক সংগঠন নয়। এটা হল এক গভীর একত্ব, তার দেহের এই চরম রহস্যই তাকে পরিচালিত করে।এই অসীমতার চেতনাই তাকে অমরতার দিকে ধাবিত করে এবং সমগ্র জগতকে নিজের বলে মনে করতে সাহায্য করে।
      মানুষের মধ্যে এই দিকটি উপস্থিতির জন্যই যে প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। দেহসর্বস্ব মানুষ কখনো প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার অনুভূতি লাভ করতে পারে না। কিন্তু মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্যে পুলকিত হয়।প্রাকৃতিক শক্তির প্রকাশ দেখে অভিভূত হয়ে যায়। মানুষ অনুভব করে, যদিও প্রকৃতি সম্পর্কে তার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা হয় যে, প্রকৃতি মানুষের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল,কিন্তু পরিণামে মানুষ প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না কারণ প্রকৃতিকে সে ভালবাসে তার অসীমতার জন্যই।
     কবির মতে, মানব প্রকৃতিতে এই দিকটি মূলতঃ সৃষ্টিশীল দিক। মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে এক সৃষ্টিশীল ক্ষমতা - যা তাকে নানাভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। 'সৃষ্টিক্ষমতা' বলতে কবি কোন নতুন কিছু গঠন করাকে বোঝান নি। এটা হল অভিনব ধারণা, নতুন এবং মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি।
     মানুষেরই অসীম প্রকৃতি তার ব্যক্তিত্বে এনে দিয়েছে গতিশীলতা এবং সদা-বিকশিত হওয়ার প্রবণতা। তবে এই বিকাশ যান্ত্রিক নয়। অথবা পুনঃ সৃষ্টির পদ্ধতি নয়। এই প্রবণতা আসে তার সৃষ্টিশীল চরিত্র থেকে।মানুষের বিকাশের প্রত্যেক স্তরে পূর্বাবস্থাকে সে যেমন বহন করে, তেমনি যুক্ত করে এবং কিছু তাজা ও নতুন বিষয়। মানুষ যদি শুধু একটা 'দেহ' হত, তবে তার বিকাশ বলতে বোঝাত দেহের বিকাশ।কিন্তু মানুষের 'ব্যক্তিত্বের' বিকাশ হল অন্তরের বিকাশ, যার সাক্ষ্য মেলে মানুষের অসীম প্রকৃতির সদা সক্রিয়তার মধ্যে।
      মানুষের অসীম প্রকৃতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল 'স্বাধীনতা'।মানুষ কিছু পরিমাণে 'স্বাধীনতা' উপভোগ করে অন্যান্য প্রাণীর থেকে তার দেহের গঠনের মধ্যেও। কিন্তু এই 'স্বাধীনতা' 'খাঁচার মধ্যে স্বাধীনতা' রবীন্দ্রনাথের মতে। 'দৈহিক মানুষ' মূলতঃ সীমাবদ্ধ তার দেহের সীমাবদ্ধতার দ্বারাই।কিন্তু যে স্বাধীনতা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অসীম প্রকৃতিকে প্রকাশ করে সেটি হলো 'আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা'। এই স্বাধীনতাই তার দেহের সীমাবদ্ধতাকে ভঙ্গ করে বিশ্বব্যাপী এক বিরাট একত্বের উপলব্ধি এনেছে তার মধ্যে।'যথার্থ স্বাধীনতা', রবীন্দ্রনাথের মতে, ক্ষুদ্র একক ব্যক্তির মধ্যে সামান্য উপলব্ধি।
  মানব প্রকৃতির এই দিকটিকে তিনি 'জীবন-দেবতা' আখ্যায় ভূষিত করেছেন।এটি জীবনের দেবতা এই জন্যই যে অস্তিত্বের আনন্দময় অনুভূতি দেয়। মানুষ প্রতি মুহূর্তে নিজের সীমাবদ্ধতাকে যে অতিক্রমের চেষ্টা করে, তার সম্ভাবনা ও উপলব্ধি রয়েছে এই আনন্দের মধ্যে। মানুষের মধ্যে এই 'দেবত্বের' উপস্থিতিই তাকে ঈশ্বর-সদৃশ করে তোলে।
                                       -----------