Thursday, June 18, 2020

6th sem honours (Nature of Ultimate Reality) by Radhakrishnan

চরম সত্যতার স্বরূপ (Nature of Ultimate Reality)
   রাধাকৃষ্ণাণ অনুভব করেছিলেন দার্শনিক অনুসন্ধানের মূল কাজ হল জগতের যথার্থ ব্যাখ্যা খুঁজে বার করা।এবং ব্যাখ্যাকারী নিয়মগুলোকে পরিণামে সত্য হতে হবে,কারণ এগুলি সব কিছুর সত্যতাকে প্রমাণ করার ভিত্তি রূপে সক্রিয় থাকবে।সুতরাং রাধাকৃষ্ণাণ চিন্তা করেছিলেন এই 'চরম সত্যতা'কে এমন সমর্থ হতে হবে - যা জগৎ সম্পর্কে 'কিভাবে' এবং 'কেন' সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তরদানে সক্ষম হবে।
      চরম সত্যতার স্বরূপ প্রকাশ করতে গিয়ে রাধাকৃষ্ণাণ এর ঝোঁক দেখা যায় ভীষণভাবে বেদান্তের দিকে।বেদান্ত দর্শনে বিশ্বাস করা হয় চরম সত্য হলো ব্রহ্ম। বস্তুতঃ বেদান্ত অনুসারে ব্রহ্মকে প্রমাণ করাও যায় অথবা প্রতিষ্ঠা করাও যায় না,তবু ব্রহ্মকে স্বীকার করা হয়।কারণ ব্রহ্ম স্বরূপ চৈতন্যের পূর্বানুমান ছাড়া কোন কিছুই চিন্তা করা যায় না।একইভাবে রাধাকৃষ্ণণ বলেছেন ---- চরম সত্য হলো ব্রহ্ম ---- এটাই সমস্ত সত্য এবং অস্তিত্বশীলতার যৌক্তিক ভিত্তি।
      এই প্রসঙ্গে স্বভাববাদীরা বলতে পারেন,এই জগৎকে ব্যাখ্যা করার জন্য অতিপ্রাকৃতিক অথবা আধ্যাত্মিক কোন তথ্যের প্রয়োজন নেই,কেননা জগতের সবকিছুরই প্রকৃতিগত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।রাধাকৃষ্ণণ মনে করেন, প্রকৃতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তি হল সময়ের সত্যতার পূর্বানুমান এবং এ জন্যই এই জাতীয় ব্যাখ্যা সময়ের মধ্যে যে সমস্ত ঘটনা ঘটে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে,সময়কে অতিক্রম করে যাওয়া বিষয়ের উপলব্ধির প্রয়োজন অনুভব করে না। এই তত্ব জগৎকে দেখে একটা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতো যা অন্ধ এবং বিশৃঙ্খলভাবে কাজ করে যায়।সময়ের জগৎকে এই তত্ত্ব একটা অচেতন শক্তিতে পরিণত করে,এবং জীবন, চৈতন্য, এবং মূলবোধক উপজাত বিষয়ে পরিণত করে। তাই জগতের প্রকৃতিগত কখনই চরম সত্যতার স্বরূপ নির্ণয় করতে পারেনা।এরা কেবল প্রকৃতির মধ্যে একটা নিয়ম-শৃঙ্খলাকে খোঁজে মাত্র-কিন্তু এটা ভুলে যায় প্রকৃতির নিয়ম-শৃঙ্খলা যান্ত্রিক নয় উদ্দেশ্য অভিমুখী।
    রাধাকৃষ্ণণ এ বিষয়ে সচেতন ছিল যে চরম সত্যকে এমন হতে হবে যার দ্বারা জগতের সবকিছুর মূল হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়।জড় জগৎ-এ এমন কোন তথ্য নেই যাকে বিবেচনা করা যেতে পারে এজন্য।জড় সবকিছুই ব্যাখ্যা যোগ্য অন্যকিছুর দ্বারা।সুতরাং চরম তত্ত্ব অবশ্যই জড়ের বাইরে থাকে,অবশ্যই দৈহিক শক্তি থেকে ভিন্ন কিছু হবে।এ কারণেই রাধাকৃষ্ণণ-এর কাছে চরম সত্য অবশ্যই 'আধ্যাত্মিক' তত্ত্ব।
     'আধ্যাত্মিক' শব্দটি নানাদিক থেকে ব্যাখ্যাযোগ্য।তবে এখানে আলোচনা শুরু হিসেবে এটুকু বলা যায় 'আধ্যাত্মিক' বিষয়টিকে নঞর্থক ভঙ্গিকে বোঝা যায়।তাহল - আধ্যাত্মিক হল এমন পৃথক বা উচ্চতর কিছু যা দৈহিকতা বা জড় থেকে উচ্চতর।রাধাকৃষ্ণণ কম-বেশি,অদ্বৈত বেদান্তিকের মতই উপলব্ধি করেছিলেন যে চরম সত্যের যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু একটা চেষ্টা করা যেতে পারে আমাদের সীমিত ভাষার সক্ষমতা থেকে।সুতরাং জগৎ-পদ্ধতির বিশ্লেষণ থেকেই এটা প্রকাশিত হয় যে,আমাদের দৈহিক ব্যাখ্যা এক সময় শেষ হয়ে যায়।তার উর্ধে আমরা আর যেতে পারি না।এর থেকে বোঝা যায়  আমাদের অনুসন্ধান করা প্রয়োজন একটি ন-দৈহিক তত্ত্বের- যার দ্বারা জগৎ-পদ্ধতির ব্যাখ্যা করা সম্ভব।