Tuesday, June 9, 2020

6th sem honours (Nature of Radhakrishnan Philosophy)

Nature of Radhakrishnan Philosophy :

     রাধাকৃষ্ণণের দার্শনিক ভাবনার  মধ্যে এক দুর্লভ গুণ সংযোজিত হয়েছিল।একদিকে তিনি প্রাচ্য দর্শনের পরম্পরাকে জানার সুযোগ পেয়েছিলেন,অপরদিকে পাশ্চাত্য দর্শনের পরম্পরাকেও গভীর অনুশীলন করেছিলেন।ফলে, তার শিশুকাল থেকে ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠার ফলে যেমন প্রাচ্যের দর্শন বোধ তীব্র ছিল,তেমনি পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে পাশ্চাত্যের দার্শনিক বোধগুলিকেও তিনি আয়ত্ত করেছিলেন যথাযথভাবে। আর এই দুই এর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল তার দার্শনিক বোধ।
     কিন্তু তার চিন্তার মূল নিহিত ছিল গভীরভাবে ভারতীয় পরম্পরার মধ্যেই।তাঁর এই মূল ভারতীয় ভাবনাটি বৈদান্তিক ভাবনার পরম্পরা।কিন্তু তিনি তার এই মূল ভাবনাটিকে উপস্থাপিত করেছিলেন পাশ্চাত্য দার্শনিক চিন্তার মডেলে।অর্থাৎ তিনি ভারতীয় প্রথাসিদ্ধ প্রাচীন ভাবনাকে অভিনব পাশ্চাত্য দর্শনের প্রকাশ করেছেন।
এ জন্যই অধ্যাপক সি.ই.এম. জোয়াড তাঁর 'Counter attacks from the East' গ্রন্থে রাধাকৃষ্ণনের অধিবিদ্যাগত দৃষ্টিকোণকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের 'সংযোগকারী আধিকারিক' রূপে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, রাধাকৃষ্ণন প্রাচ্যের প্রথানুগত জ্ঞানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের নতুন জ্ঞান এবং শক্তির সেতুবন্ধন করেছেন।এর থেকে বলা যায় তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবনার সমন্বয় যে করেছিলেন সেটা পাশ্চাত্যের চিন্তাবিদদের দ্বারাও স্বীকৃত।
      তাঁর প্রাথমিক দার্শনিক অবস্থানকে 'অদ্বৈত বেদান্ত' এবং 'চরম ভাববাদ' এর দর্শনের এক ধরনের সমন্বয় বলা যায়।তিনি বৈদান্তিক সত্যতা থেকে নিয়েছেন অদ্বৈতবাদী চরিত্র এবং এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন চরম ভাববাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক। বৈদান্তিকদের মত তিনি বিশ্বাস করতেন যে 'সত্যতা হলো এক',আবার চরম ভাববাদীদের মতো তিনি দেখিয়েছেন 'সবকিছুই হল সেই এক অবশ্যম্ভাবী দিক'।এর ফলে দর্শনের একজন বিশ্লেষক পাঠকের কাছে তাঁর দর্শনকে যে কোন আধুনিক অধিবিদ্যাগত মডেলের আকৃতি অনুধাবন করা সমস্যাবিশেষ হয়ে দাঁড়ায়।তাঁর দর্শনকে মোটামুটিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় 'অদ্বৈতবাদী' ভাবনা হিসাবে।এই দর্শন 'অদ্বৈতবাদী' কারণ এখানে 'সত্যতা' গৃহীত হয় 'এক'রূপে এবং এই দর্শনকে বলা যায় ভাববাদ  একাধিক যুক্তিতে।তাঁর ভাববাদ অবশ্যই অধিবিদ্যাগত,কিন্তু অধিবিদ্যাগত ভাববাদ হতে পারে দুই প্রকারের।হয় 'ধারণা বা ভাববাদ অথবা 'আদর্শ-বাদ'।প্রথমটির অর্থ হল----- প্রকৃত সত্যতা হলো ধারণা - এটা হতে পারে মানসিক অথবা আধ্যাত্মিক। রাধাকৃষ্ণাণ নিজেও 'সত্যতা' বলতে বুঝিয়েছেন 'আধ্যাত্মিক সত্যতা'কে।সুতরাং এই দিক থেকে তিনি একজন ভাববাদী।অন্যদিক থেকে আদর্শ-বাদ আবার গুরুত্ব আরোপ করে কোন আদর্শ বা মূল্যকে চরম হিসেবে। রাধাকৃষ্ণন আদর্শবাদের এই অর্থকেও গুরুত্ব দিয়েছেন  এবং নিজের দার্শনিক দৃষ্টিকোণকে আদর্শবাদী দৃষ্টিকোণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন এই অর্থে যে,তাঁর দর্শন বিশ্বাস করে আধ্যাত্মিক দর্শনের দিকেই সমস্ত জগৎ-পদ্ধতি ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে।
     'ধারণা বা ভাব' এবং ভাববাদ শব্দটি নানা অর্থ তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এবং সিদ্ধান্তে এসেছেন 'ভাব' এর প্রকৃত অর্থ বিষয়ে।যখন আমরা কোনো বিষয় বা কাজের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করি এর ধারণাটা কি? আমরা এটাই বোঝাতে চাই যে কি মূল নিয়ম এর মধ্যে আছে অথবা এর অর্থ কিংবা উদ্দেশ্য কি? অথবা এর লক্ষ্য বা মূল্য কি? এর থেকে বোঝা যায় একটি ধারনার প্রকৃতি নির্ণয় করতে গিয়ে আমরা চেষ্টা করি সে বিষয়টা কোন দিকে যাচ্ছে।এভাবে যদি আমরা উপলব্ধি করি যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কোন কিছুর দিকে গতিশীল----তাহলে এটার একটা অর্থ এবং মূল্য আছে,এটা অন্ধের মতো এগিয়ে চলার নয় অথবা অসভ্য সামনের দিকে গতি নয়, বরং ক্রমাগত আরও উচ্চতর পরিণতির দিকে অগ্রগতি - এই ভাবনাই আমাদের একজন ভাববাদী করে তোলে। এই অর্থে, একজন ভাববাদী হন একজন উদ্দেশ্যবাদীও, যে বিশ্বাস করে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটা চরম অর্থ এবং উদ্দেশ্য আছে।
      সুতরাং তাঁর দর্শন বলে - এই জগতের চরম প্রকৃতি হল আধ্যাত্মিক, এবং যতদিন না আধ্যাত্মিক অনুভূতির কারণ হচ্ছে ততদিন মানব জীবনে এই বিশৃঙ্খল, অমঙ্গলজনক এক আতঙ্ক থাকবে।এভাবে তিনি সবকিছুকেই চরম আধ্যাত্মিকতার ওপর অসম্ভব গুরুত্ব আরোপ করার ফলে তাকে, অতিন্দিয়বাদী বলে অনেকে চিহ্নিত করেছেন। তবে বি.কে. লাল তাঁর, 'Contemporary Indian Philosophy' গ্ৰন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন '..but his mysticism is mysticism only to the extent to which idealistic thought of the monisitic variety tends towards it'.
     
                                    -----------