Wednesday, June 3, 2020

6th sem honours (Biography of S.Radhakrishnan)


  মাদ্রাজ শহরের 40 মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত 'তিরুতানি' নামে ক্ষুদ্র শহরের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারের 1888 খ্রিস্টাব্দের 5 ই সেপ্টেম্বর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন জন্মগ্রহণ করেন।সংসারের অভাব-অনটন তাঁর শিক্ষার আগ্রহের বিশেষ ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারেনি।'তিরুতানি' শহরেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়।নিজের সম্বন্ধে বলেছেন :
  আমার পিতামাতা সাধারণ ঐতিহ্যগতভাবেই ধর্ম বিশ্বাসী ছিলেন।বিভিন্ন খ্রিস্টান মিশনারী বিদ্যালয়ে আমি দ্বাদশ বছর শিক্ষা করেছিলাম।তার মধ্যে তিরুপতি শহরের লুথেরান মিশন হাইস্কুল, ভেলোর ভূরহীজ কলেজে ও মাদ্রাস ক্রিস্টান কলেজ পর্যন্ত।সুতরাং এক অদৃষ্ট জীবন্ত পরমার্থিক সত্তার আবহাওয়ার মধ্যেই যে আমি মানুষ হয়ে ছিলাম,সে কথা বলা চলে।এইভাবে মানুষ হওয়ার ফলে আমার দার্শনিক তত্ত্বজ্ঞান ও তার সমস্যা বিচারের ধারা,ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ এর পরিবর্তে ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে গড়ে উঠেছিল এবং আমি দর্শনকে তর্ক শাস্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারিনি।
    মাত্র সতেরসতের বয়সে তিনি যখন বিয়ে ক্লাসে ভর্তি হওয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন,সে সময় তার এক সদ্য বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জ্ঞাতি ভ্রাতা নিজের দর্শনের বইগুলি তাঁকে উপহার দেন এবং তিনিও দর্শন শাস্ত্রকেই নিজের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত করেন। মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজের ছাত্র রূপে রাধাকৃষ্ণণ বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।বি.এ পরীক্ষায় নীতিবিদ্যার উত্তর পত্রে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং সেজন্য 'ডঃ স্যামুয়েল সাথিয়ানাথন' স্বর্ণপদক লাভ করেন।
   ছোটবেলা থেকেই খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল কলেজে পড়ার ফলে খ্রিস্টান ধর্মশাস্ত্র, বাইবেল সম্বন্ধে তিনি প্রভূত জ্ঞানার্জন করেন। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারীরা হিন্দুধর্মের অহেতুক কঠোর সমালোচনা করতেন সে সময়ে----- তিনি গভীর বেদনাবোধ করতেন।তাঁর নিজের হিন্দুত্বের অহংকারের আঘাত অনুভব করতেন। ফলে গভীরভাবে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ হিন্দু দর্শন পাঠে তিনি আত্মনিয়োগ করলেন।
    সেসময় হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রধান অভিযোগ ছিল হিন্দু ধর্মে নৈতিকতার কোন স্থান নেই।এই অন্যায় অপবাদ এর প্রতিকার করার জন্য তিনি এক বিশেষ পন্থা গ্রহণ করলেন।সেসময় মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ.পরীক্ষায় অন্যান্য উত্তরপত্রের সঙ্গে একটি মৌলিক প্রবন্ধ রচনা করতে হতো। রাধাকৃষ্ণণ এই সুযোগে 'Ethics of Vedanta' নামে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম অনুযায়ী জমা দিলেন।ঐ  উত্তরপত্রে পরীক্ষক বিশিষ্ট অধ্যাপক Prof.Hogg প্রবন্ধটি পড়ে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে সে বছরই প্রবন্ধটি পুস্তকাকারে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।
   এম.এ. পরীক্ষা পাসের পর রাধাকৃষ্ণাণ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। এম এ পরীক্ষা পাশের পর সালে তিনি 1911 সালে এল.টি অর্থাৎ 'লাইসেনসিয়েট ইন টিচিং' উপাধি লাভ করেন। 1918 সালে তিনি মাইসোর ইউনিভার্সিটিতে 'প্রফেসর অফ ফিলোসফি' হিসেবে নিয়োগপত্র পান। 1921 সালে সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'জর্জ ভি' অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। 1928 সালে জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে রাধাকৃষ্ণণের পরিচয় ঘটে।
    রাধাকৃষ্ণাণ বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানোর এবং বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।1929 সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যানচেষ্টার কলেজে অধ্যক্ষের পদ তাঁকে দেওয়া হয়। 1936 সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক এম.এ. ডিগ্রি তাঁকে দেওয়া হয়। 1936 থেকে 1938 তিনি অক্সফোর্ড-এ 'Spalding Professor' পদ গ্রহণ করেন এবং ভারতীয় দর্শন প্রসঙ্গে বক্তৃতা দেন।1949-1952 সোভিয়েত রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন।1952-62 ভারতের উপ রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হন এবং 1962-67 ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন।
   1975 সালের 16 এপ্রিল অল্প রোগভোগের পর রাধাকৃষ্ণাণ পরলোকগমন করেন।
                                      ---------